
ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম প্রাচীন ক্লাব নটিংহাম ফরেস্টের ইতিহাসের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এবং স্কটল্যান্ডের সাবেক কিংবদন্তি ফুটবলার জন রবার্টসন আর নেই। ৭১ বছর বয়সে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। নটিংহাম ফরেস্টের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাদের সর্বকালের সেরা এই খেলোয়াড়ের প্রয়াণের খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে ফরেস্টের টানা দুবার ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগ) জয়ের নেপথ্য কারিগর ছিলেন এই লেফট উইঙ্গার। তার খেলার শৈল্পিক কারুকার্য দেখে ক্লাবটির তৎকালীন কিংবদন্তি কোচ ব্রায়ান ক্লফ তাকে ‘ফুটবল মাঠের পিকাসো’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তার মৃত্যুতে ফুটবল বিশ্বে এবং বিশেষ করে নটিংহাম ও স্কটল্যান্ডে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নটিংহাম ফরেস্ট তাদের শোকবার্তায় জানিয়েছে যে, জন রবার্টসন কেবল একজন খেলোয়াড়ই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ক্লাবের এক অটল নিবেদিতপ্রাণ বন্ধু। ১৯৭৯ সালের ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে মালমোর বিপক্ষে তার ক্রস থেকেই ট্রেভর ফ্রান্সিস জয়সূচক গোলটি করেছিলেন।
এর ঠিক এক বছর পর হামবুর্গের বিপক্ষে ফাইনালে তিনি নিজেই গোল করে দলকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট এনে দেন। ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকার বিচারে রবার্টসন এখনো ফরেস্টের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃত। ক্লাবটির বিবৃতিতে জনের অতুলনীয় প্রতিভা, বিনয় এবং অদম্য দেশপ্রেমের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
স্কটল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়েও রবার্টসনের ক্যারিয়ার ছিল বেশ সমৃদ্ধ। পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৮ ম্যাচে তিনি ৮টি গোল করেছিলেন। এর মধ্যে ১৯৮১ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়সূচক গোল এবং ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা গোলটি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তবে তার ক্লাব ক্যারিয়ারই ফুটবল ইতিহাসে বেশি আলোচিত।
১৯৭০ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি নটিংহাম ফরেস্টে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে কোচ ব্রায়ান ক্লফ দায়িত্ব নেওয়ার পর রবার্টসনের ফুটবলার সত্তার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ক্লফ তাকে মাঝমাঠ থেকে সরিয়ে বাঁ উইংয়ে খেলার সুযোগ করে দেন, যার ফলশ্রুতিতে ফরেস্ট ১৯৭৮ সালে ইংলিশ লিগ এবং পরবর্তীতে টানা দুইবার ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি জয় করে।
কোচ ব্রায়ান ক্লফের অত্যন্ত বিশ্বস্ত এই শিষ্য ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ২৪৩টি ম্যাচ খেলেছিলেন, যা তার শারীরিক সক্ষমতা ও গুরুত্বেরই প্রমাণ দেয়। ক্লফ তার সম্পর্কে বলতেন যে, রবার্টসনের ক্রস দেওয়ার ক্ষমতা ব্রাজিলিয়ান বা ইতালিয়ান ফুটবলারদের মতোই নিখুঁত ও সুন্দর ছিল। ১৯৮৩ সালে তাকে ডার্বি কাউন্টির কাছে বিক্রি করা নিয়ে কোচ ও তার সহকারীর মধ্যে সম্পর্কের চির ধরাও ফুটবলাঙ্গনে এক আলোচিত অধ্যায়।
রবার্টসন তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ফরেস্টের হয়ে ৪৯৯ ম্যাচে ৯৫টি গোল করেছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি পারকিনসনস রোগে ভুগছিলেন। তার প্রয়াণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফরেস্ট সমর্থকরা ‘শান্তিতে ঘুমাও রোবো’ লিখে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।