
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, গত আট মাসে তিনি বিশ্বের আটটি বড় সংঘাত প্রশমিত করেছেন। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এবার ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত সমাধান করাই হবে তার নবম সাফল্য।
ট্রাম্প বলেন, ‘এটা হবে আমার নম্বর নাইন। আমি আটটা সংঘাত মিটিয়েছি, যার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যও রয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা আমার কাছে সবচেয়ে সহজ মনে হয়েছিল। (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিন গতকাল আর্মেনিয়াসহ বিভিন্ন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি অবাক হয়েছেন—বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে আমরা যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি, সেটাতেই তিনি সবচেয়ে বেশি বিস্মিত।’
এই বৈঠকে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দীর্ঘপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র চাইছেন, যা রাশিয়ার ভেতরে গভীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে বৈঠকের আগের দিনই ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং নতুন এক রুশ-আমেরিকা সম্মেলনের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে কিয়েভকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
ট্রাম্প আবারও বলেন, তার এসব প্রচেষ্টা নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। ‘মজার ব্যাপার হলো, আমি প্রতিবার একটা সংঘাত মিটাই, আর সবাই আগেরটা ভুলে যায়। আমি আটটা যুদ্ধ মিটিয়েছি—রুয়ান্ডা, কঙ্গো, ভারত-পাকিস্তান, থাইল্যান্ড… প্রতিবারই তারা বলে, “পরেরটা মিটালে তুমি নোবেল পাবে।” কিন্তু পেল এক ভালো মহিলা—আমি জানি না উনি কে, তবে উনি খুব উদার।’
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং পাকিস্তান-ভারত সংঘাতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। গাজায় বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রে অংশ নেওয়ার সময় তিনি ট্রাম্পের ‘অসাধারণ নেতৃত্বের’ প্রশংসা করেন এবং দু’বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার মনোনয়নও সমর্থন করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধগুলোর কোনোটা আমাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ছিল না, তবু আমি কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি পাকিস্তান-ভারতের সংঘাতে হস্তক্ষেপ করে লাখ লাখ প্রাণ বাঁচিয়েছি। দুই পারমাণবিক দেশ—ওটা ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে পারত।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও আমি বুঝতে পারছি পাকিস্তান আফগানিস্তানে আক্রমণ করেছে, বা কোনো সংঘাত চলছে। এটা এমন একটা ব্যাপার যা আমি চাইলে সহজেই মিটিয়ে ফেলতে পারি। আপাতত আমাকে যুক্তরাষ্ট্র চালাতে হচ্ছে, কিন্তু আমি যুদ্ধ সমাধান করতে ভালোবাসি।’
তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি সংসদে বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পেছনে কোনো বিদেশি নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল না। তিনি বলেন, ‘কোনো বিশ্বনেতা আমাদের অপারেশন থামাতে বলেননি।’
এদিকে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গত ৭ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। ইসলামাবাদ এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের ভূমিকা স্বীকার করলেও নয়াদিল্লি তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।