
স্ত্রীর গায়ের রঙ কালো—এ কারণে নিয়মিত অপদস্ত করতেন স্বামী কিষাণদাস। শেষ পর্যন্ত সেই ‘অপমান’কেই অজুহাত বানিয়ে স্ত্রী লক্ষ্মীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেন তিনি। এ মামলায় ভারতের একটি আদালত কিষাণদাসকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন।
লক্ষ্মীর হত্যাকাণ্ড ঘটে আট বছর আগে। ২০১৭ সালের ২৪ জুন রাতে উত্তর ভারতের উদয়পুর শহরে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর সপ্তাহান্তে রায় ঘোষণা করেন জেলা জজ রাহুল চৌধুরী।
মৃত্যুর আগে দেয়া বিবৃতিতে (ডাইং ডিক্লারেশন) লক্ষ্মী জানিয়েছিলেন—বিয়ের পর থেকেই স্বামী তাকে ‘কালো’ বলে কটাক্ষ করত এবং শারীরিক গঠন নিয়ে অপমান করত। ঘটনার রাতে কিষাণদাস একটি প্লাস্টিক বোতলে বাদামি রঙের তরল নিয়ে আসে। সে দাবি করে, এটি নাকি গায়ের রঙ ফর্সা করার ওষুধ। পরে সেই তরল লক্ষ্মীর শরীরে মাখিয়ে আগরবাতি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে বাকিটুকু তরল ঢেলে কিষাণদাস পালিয়ে যায়।
রায়ে বিচারক চৌধুরী লিখেছেন, এ হত্যাকাণ্ড ‘বিরল ঘটনার মধ্যেও বিরল’ শ্রেণিতে পড়ে। এটি শুধু লক্ষ্মীর বিরুদ্ধে নয়, মানবতার বিরুদ্ধেও অপরাধ। তিনি বলেন— “কিষাণদাস স্ত্রীর বিশ্বাস ভেঙেছে এবং তাকে জ্বলন্ত অবস্থায় তরল ঢেলে অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে। এ ধরনের অপরাধ মানবতার বিবেককে নাড়িয়ে দেয়।”
সরকারি কৌঁসুলি দিনেশ পালিওয়াল এ রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, “একজন তরুণীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে ছিল কারও বোন, কারও মেয়ে, যাকে ভালোবাসার মানুষ ছিল। যদি আমরা আমাদের মেয়েদের বাঁচাতে না পারি, তবে আর কে পারবে?”
তিনি আরও জানান, হাইকোর্টে রায় পাঠানো হয়েছে ফাঁসির দণ্ড নিশ্চিত করতে। তবে দোষীর কাছে আপিল করার জন্য ৩০ দিনের সময় রয়েছে।
অন্যদিকে আসামি কিষাণদাসের আইনজীবী সুরেন্দ্র কুমার মেনারিয়া দাবি করেছেন, তার মক্কেল নির্দোষ। লক্ষ্মীর মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত এবং তাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এ কারণে তারা হাইকোর্টে আপিল করবেন।