
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভাষণ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই ভাষণ দক্ষিণ ইসরায়েলের গাজা সীমান্তে লাউডস্পিকারে শোনানো হয়। তবে অনেক গাজাবাসী দাবি করেন, তারা এই ভাষণ শুনতে পাননি।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এদিন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল অবশ্যই গাজায় তার কাজ (হামাসকে নির্মূল) শেষ করবে।
নেতানিয়াহু এদিন ভাষণ দিতে গিয়ে বিশ্বনেতাদের চাপের মুখে পড়েন। তিনি বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠতেই বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা গণহারে ওয়াকআউট করেন। তবে এরপরও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু।
আন্তর্জাতিক চাপের কথা উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘পশ্চিমা নেতারা হয়তো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। আর আমি আপনাদের একটা বিষয় নিশ্চিত করছি, ইসরায়েল এমনটা করবে না।’
ভাষণে নেতানিয়াহু দাবি করেন, তার বক্তব্য গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। গাজার বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে সব গাজাবাসী তা শুনতে পাননি। আর যারা শুনেছিলেন, তাদের সবাই এতে মনোযোগও দেননি।
গাজার বাসিন্দা ফাদি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা দূর থেকে কিছু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু মানুষের ভিড় এবং গোলমালের কারণে তা অস্পষ্ট ছিল।’
ফাদি আরও প্রশ্ন করেন, ‘অবরুদ্ধ বেসামরিক মানুষদের তাঁবুর ভেতরে জোর করে তাঁর ভাষণ প্রচার করে কী লাভ?’
অন্যদিকে, যারা গাজার দক্ষিণে রাফাহতে ছিল, তারা কিছুই শুনতে পারেনি।
কেন্দ্রীয় গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহ শহরে আশ্রয় নেওয়া ৩০ বছর বয়সী বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নারী রান্দা হানান বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, নেতানিয়াহুর এই দাবি সত্য নয়। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা কথা। আমরা কোনো বার্তা বা ফোনে কিছুই পাইনি। কোনো লাউডস্পিকারও শুনিনি।’
হানান বলেন, ইসরায়েলি গণমাধ্যমে লাউডস্পিকারের ছবি দেখা ছাড়া তিনি নেতানিয়াহুর ভাষণ শুনতে পারেননি, যদিও তিনি শুনতে চাইতেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, যদি তারা সত্যিই ট্রাকে করে স্পিকার বসিয়ে গাজার চারপাশে ঘোরানোর চেষ্টা করত। আমার মনে হয়, তারা খুব ভয় পেত।’
নেতানিয়াহু ভাষণে হামাস সদস্যদের উদ্দেশে অস্ত্র নামিয়ে রেখে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে সতর্কবার্তা দেন। এ ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় হামাস টেলিগ্রামে একটি দীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু একটি ‘বিভ্রান্তিকর’ ভাষণ দিয়েছেন, যাতে ধারাবাহিকভাবে ‘স্পষ্ট মিথ্যা ও স্ববিরোধী তথ্য’ ছিল।
হামাস আরও বলেছে, মিথ্যা দিয়ে সত্য পরিবর্তন করা যাবে না। তারা মনে করে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যা করছে, অর্থাৎ ‘মিথ্যা, ভুল তথ্য এবং পদ্ধতিগত হত্যার’ মাধ্যমে ‘দখলদারি’ চালাচ্ছে, যা সম্পর্কে বিশ্ব এখন ‘আরও বেশি সচেতন’।
বিবৃতির শেষে হামাস বিশ্বের কাছে দাবি জানায়, তারা যেন গাজায় এই হত্যা বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেয় এবং ইসরায়েলকে এই ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে, খাবার ও ওষুধ প্রবেশের অনুমতি দেয় এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপগুলো সম্পূর্ণ করে।
নেতানিয়াহু আগ্রাসন থামানোর কোনো ইঙ্গিত না দিলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার দাবি করেছেন, তিনি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করার একটি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছেন।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা গাজা নিয়ে একটি চুক্তির পথে আছি। আমি মনে করি, এই চুক্তিতেই জিম্মিদের মুক্তি মিলবে। এটি এমন একটি চুক্তি হবে, যা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবে।’
তবে তিনি কোনো বিস্তারিত তথ্য বা সময়সীমা জানাননি। আগামী সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের কথা রয়েছে।