
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যুদ্ধ শেষ করার মার্কিন পরিকল্পনার অধীনে গাজায় তুর্কি সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেবে না ইসরায়েল। সোমবার (২৭ অক্টোবর) জায়নবাদী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার এ কথা বলেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। এই মাসে শুরু হওয়া ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে বাহিনীটি সাহায্য করবে।
কিন্তু আরব এবং অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক বাহিনীতে সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
হাঙ্গেরিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি মন্ত্রী বলেন, ‘যেসব দেশ সশস্ত্র বাহিনী পাঠাতে চায় বা পাঠাতে প্রস্তুত, তাদের অন্তত ইসরায়েলের প্রতি ন্যায্য আচরণ করা উচিত।’
একসময়ের উষ্ণ তুর্কি-ইসরায়েল সম্পর্ক গাজা যুদ্ধের সময় মারাত্মকভাবে তিক্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, যখন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান অব্যাহতভাবে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক গণহত্যার নিন্দা করেন।
গিডিয়ন সার বলেন, ‘এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিকূল মনোভাব পোষণ করেছে। তাই তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে দেওয়া আমাদের পক্ষে যুক্তিসঙ্গত নয় এবং আমরা এতে একমত হব না। আমরা আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের কাছে এটি বলেছি।’
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প প্রশাসন গাজায় মার্কিন সৈন্য পাঠানোর বিষয়টি নাকচ করে দিলেও বহুজাতিক বাহিনীতে অবদান রাখার জন্য ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, কাতার, তুরস্ক এবং আজারবাইজানের সঙ্গে কথা বলছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি গাজায় তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনীর যে কোনো ভূমিকার তীব্র বিরোধিতা করবেন। তিনি বলেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনীকে অনুমতি দেওয়া হবে, তা ইসরায়েল সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রসঙ্গত, গাজা অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে উঠেছিল।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।