
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও অন্তত ৭৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা নগরীতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন। নিহতদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। রোববার (৩১ আগস্ট) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণ ও জোরপূর্বক উচ্ছেদের মুখে গাজা নগরী থেকে শত শত ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। হাতে গোনা কিছু মালপত্র ট্রাক, ভ্যান কিংবা গাধার গাড়িতে বোঝাই করে তারা নিরাপত্তার খোঁজে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম দিকে বহু পরিবার খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাঁবু ফেলতে শুরু করেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ পরিবার একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর আবারও ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ মারুফ বলেন, ‘আমরা রাস্তায় পড়ে আছি। কী বলব? কুকুরের মতো? না, কুকুরের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি।’ তিনি জানান, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে আগেই বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।
আরেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ আবু ওয়ারদা আল জাজিরাকে জানান, তিনি উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকা ছেড়ে পশ্চিম দিকে যাচ্ছেন। তবে গন্তব্য কোথায় হবে তা স্পষ্ট নয়। তার ভাষায়, ‘অবস্থা এত ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল যে বেরোতেই হয়েছে। এখানে তাঁবু খাটানোর জায়গা পেলেই সৌভাগ্য মনে করব। কোথাও নিরাপদ নেই, সর্বত্র ইসরায়েলি হামলা চলছে।’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আগস্টের শুরু থেকে চালানো এই অভিযানের উদ্দেশ্য গাজা নগরী দখল করে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা। গত শুক্রবার ইসরায়েল জানিয়েছিল, তারা নগরী দখলের ‘প্রাথমিক ধাপ’ শুরু করেছে এবং শহরটিকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে শনিবার নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই দিনেই ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কেবল গাজা নগরীতেই নিহত হন ৪৭ জন, যার মধ্যে ১১ জন ছিলেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে। অন্যদিকে আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে আহতদের উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা অব্যাহত ছিল।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘গাজা নগরীজুড়ে হামলা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ঘরবাড়ি, কমিউনিটি সেন্টার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনধারার ভিত্তি ভেঙে পড়ছে। দুর্ভিক্ষ, অনাহার ও পানিশূন্যতার মধ্যে এখন এই জনগোষ্ঠীকে মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রধান মিরজানা স্পোলজারিচ এগার শনিবার বলেন, গাজার জনগণকে গণহারে উচ্ছেদের পরিকল্পনা ‘অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য।’ তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কিছু সম্মানজনক ও নিরাপদভাবে বাস্তবায়ন করা একেবারেই সম্ভব নয়।
তবে আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে আসছে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দায়মুক্তি নিশ্চিত করছে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যা আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং কার্যত জাতিগত নিধনের শামিল বলে বিবেচিত হচ্ছে।