
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ৩৫ শিশুসহ ১০০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (২৯ অক্টোবর) বলেছেন, এতে ‘যুদ্ধবিরতি বিপন্ন হয়নি’।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) জাপান থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প জানান, তিনি সর্বশেষ হামলার কথা শুনেছেন, কিন্তু এই হামলা ইসরায়েলিদের আক্রমণ।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ করেছে; হামলা হলে তাদের পাল্টা আক্রমণ করা উচিত।’
এই হামলা গাজার যুদ্ধবিরতিকে বিপন্ন করতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুই এই যুদ্ধবিরতি বিপন্ন করতে পারবে না।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় হামাস খুবই ছোট একটি অংশ। তারা বলেছে, তারা শান্ত থাকবে। যদি শান্ত থাকে, তাহলে তারা সুখে থাকবে। কিন্তু যদি তারা বিশৃঙ্খলা করে, তবে তাদের বহিষ্কার করা হবে।’
নতুন করে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েলি হামলার পর বিশ্লেষকরা বলছেন, বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের লাগাম টানতে আরব রাষ্ট্রগুলোর উচিৎ যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়া।
লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রভাষক রব গেইস্ট পিনফোল্ড বলেন, ট্রাম্প অন্যান্য বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার আগে তুরস্ক এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মতো মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিগুলোকে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
ইসরায়েল নতুন করে আক্রমণের মাধ্যমে পুনরায় গণহত্যার এই ধারা বজায় রাখতে চাইবে। ইতোমধ্যেই তারা গাজার ৫০ শতাংশেরও বেশি সরাসরি দখল করে আছে- বাকি অংশ একটি ‘অবরুদ্ধ’ অঞ্চল, যেখানে ইসরায়েলি অবরোধ চলছেই।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং হামাস একটি শান্তি পরিকল্পনার চুক্তিতে পৌঁছেছে। প্রথম পর্যায়ে মধ্যে সমস্ত বন্দিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি রেখার বাইরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১০ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
গাজা অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতেও একটি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গত ২৭ মে থেকে গাজায় পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ প্রকট হয়ে উঠেছিল।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যায়। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হয়। সেই সঙ্গে দুর্ভিক্ষে শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।