
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসরায়েলি সেনারা নতুন করে অভিযান জোরদার করেছে। রোববার (৩১ আগস্ট) সারাদিন ধরে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় শিশু ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩২ জন খাদ্য সহায়তার জন্য লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় প্রাণ হারান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে জোরপূর্বক সরিয়ে দিতে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। রোববার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শুধু গাজা উপত্যকাতেই প্রাণ হারান অন্তত ৭৮ জন। এর মধ্যে খাদ্য সংগ্রহে যাওয়া ৩২ জনও রয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানায়, ওই দিন ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে আল-কুদস হাসপাতালের পাশে স্থাপিত তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। এছাড়া রিমাল এলাকায় এক আবাসিক ভবনে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও তিনজন আহত হন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি সেনারা আবাসিক এলাকায় ‘বিস্ফোরক রোবট’ ব্যবহার করছে এবং মানুষকে জোর করে উচ্ছেদ করছে। তাঁর দাবি, গত তিন সপ্তাহে অন্তত ৮০টি বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তিনি এটিকে ‘ভূমি পোড়াও নীতি’ বলে আখ্যা দেন।
আল-থাওয়াবতা আরও বলেন, ধ্বংসযজ্ঞ ও দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলের ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
অন্যদিকে আল জাজিরা যাচাইকৃত এক ভিডিওতে দেখা যায়, সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ঘন ধোঁয়া উড়ছে। আহত এক শিশুকে রক্তাক্ত অবস্থায় চিৎকার করতে শোনা যায়, আরেকজন শিশু গুরুতর মাথার আঘাতে মাটিতে পড়ে আছে। আশপাশের ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত আগস্টের শুরু থেকেই গাজা সিটিতে অবিরাম গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত শুক্রবার তারা শহরটিকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা করে নতুন আক্রমণের ঘোষণা দেয়।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণ ও বুলডোজারের মাধ্যমে আবাসিক এলাকা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল। তার ভাষায়, ‘সেখানে প্রকৃত কোনো যুদ্ধ নেই, শুধু ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। মানুষ পালাতেও পারছে না, কারণ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই।’
এদিকে রোববার গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় আল-কুদস আল-ইয়াওম টিভির সাংবাদিক ইসলাম আবেদ নিহত হন। গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ২৪৭ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অন্য হিসাবে এই সংখ্যা ২৭০ জনেরও বেশি। সোমবার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ২১ জন নিহত হন, তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন সাংবাদিক।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় অন্তত ৬৩ হাজার ৪৫৯ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আটক হয়েছিলেন।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান আইয়াল জামির রোববার শীর্ষ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে আরও হামলার নির্দেশ দেন। তিনি জানান, লড়াই তীব্র করতে নতুন করে বহু রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হয়েছে।
এদিকে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড দাবি করেছে, শনিবার তারা গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর দুটি যানবাহনে হামলা চালিয়েছে। এর একটি মার্কাভা ট্যাংকের ওপর ইয়াসিন-১০৫ রকেট নিক্ষেপ করা হয় এবং একটি ডি-৯ সামরিক বুলডোজারকে বিস্ফোরকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।