
পার্বত্যজেলা খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে চলা আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি এ ঘটনার জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে আসক। বিবৃতিতে ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মার্মা সম্প্রদায়ের এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়। ন্যায়বিচারের দাবিতে স্থানীয় তরুণেরা কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ, অবরোধ ও হরতাল পালন করে আসছিলেন। তবে প্রতিবাদ চলাকালীন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেওয়া পদক্ষেপ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী সংঘর্ষে রূপ নেয়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আসক মনে করে, সংঘটিত ঘটনায় যদি কোনো অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটে থাকে। তাহলে সরকার যেন তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, পার্বত্য এলাকায় প্রায়ই উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে, যা জনজীবন ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির কারণও হচ্ছে। অতীতে সংঘটিত এ ধরনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত এবং পেছনের অন্তর্নিহিত কারণ নিরূপণ না হওয়ায় এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
সংস্থাটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র মনে করে, বাংলাদেশ একটি বহুজাতি ও বহু সংস্কৃতির দেশ। এই বৈচিত্র্য আমাদের শক্তি, বিভেদ নয়। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কেবল পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য নয়, বরং জাতীয় ঐক্য ও দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সহিংসতা, ভীতি ও উসকানি কখনোই সমাধান নয়। এগুলো কেবল পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এবং রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, নাগরিক অধিকার সবার জন্য সমান। কারও প্রতি অবিচার, কারও প্রতি বৈষম্য কিংবা কারও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়া মানে রাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অবিলম্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে হবে। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনও জরুরি।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন, সম্পদ ও মর্যাদা রক্ষা করা। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে এর পরিণতি গোটা সমাজকেই বহন করতে হবে।’
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতার’ ব্যানারে অবরোধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুর ১টার দিকে গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান সই করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেকে আহত হয়েছেন।