
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পুনরায় ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। চলমান কার্গো সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের পর কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি আংশিক ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর বিশেষজ্ঞ একটি দলকে। তারা ভবনের কাঠামোগত অবস্থা পর্যালোচনা করে ব্যবহার উপযোগিতা যাচাই করতেছেন।
বেবিচকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কয়কটি দিনের মধ্যেই বিশেষজ্ঞ দল ভবনটি কীভাবে ব্যবহার উপযোগী করা যায়, সে বিষয়ে একটি ড্রইং বা নকশা প্রস্তুত করবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
জানা গেছে, বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। তাদের প্রতিবেদন আগামী রোববার বেবিচকের হাতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ভবনের কোন অংশগুলো অল্প সময়ে সংস্কার করে ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর শনিবার বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আগুনে পুড়ে যায় হাজার কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক সরঞ্জাম। বর্তমানে কার্গো হাউজ না থাকায় বিপুল পরিমাণ পণ্য খোলা আকাশের নিচে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যা বৃষ্টি বা আবহাওয়া পরিবর্তনে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ টন পণ্য আমদানি হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে। তবে বর্তমানে মাত্র একটি গেট দিয়ে মালামাল খালাসের কার্যক্রম চালু থাকায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন। একই গেট দিয়ে কুরিয়ার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, অ্যাকসেসরিজ ও কমার্শিয়ালসহ সব ধরনের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।
ফলে সকালে সিরিয়াল দিলেও অনেক সময় বিকেল পর্যন্ত পণ্য ডেলিভারি সম্পন্ন হচ্ছে না। বর্তমানে দৈনিক ২০০ টনের বেশি পণ্য ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। পচনশীল পণ্য রক্ষায় শুক্রবার ও শনিবারসহ ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালু রাখা হলেও কার্গো সংকট পুরোপুরি কাটছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য এয়ার কমোডর মো. নূর-ই-আলম বলেন— ‘কার্গো ব্যবস্থাপনায় দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। ঘটনাটির প্রকৃত কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সহযোগিতায় তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে তুরস্কের একটি বিশেষজ্ঞ দল তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি আরও তিনটি দেশ থেকে তদন্ত কমিটি আহ্বান করা হয়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আগুনের উৎস ও কার্গো ভবনের ক্ষয়ক্ষতি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায়। দেশে একাধিক সরকারি ও বেসামরিক সংস্থা মিলে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটি তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটি তদন্তের পাশাপাশি ভবনের কাঠামোগত নিরাপত্তা ও ব্যবহারযোগ্যতা যাচাই করা হচ্ছে। যদি দেখা যায় ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী, তবে পর্যাপ্ত সংস্কারের মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম এই ভবনে পুনরায় শুরু করা হবে। তবে বর্তমানে আমদানিকৃত পণ্যে ৯ নম্বর গেইট দিয়ে ডেলিভারি চলমান আছে। এতে ধীরে ধীরে কার্গো কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আমরা আশা করছি।