
ইসরায়েল কাতারে হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপকে ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ও ইসরায়েলি স্বার্থের পরিপন্থী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ হামলায় ‘খুব অসন্তুষ্ট’ এবং এ বিষয়ে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি দেবেন বলে জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের এক রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এতে খুশি নই। এটি ভালো পরিস্থিতি নয়। আমরা জিম্মিদের মুক্তি চাই, তবে আজ যা ঘটেছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই।’ যদিও ইসরায়েল এই হামলার পক্ষে সাফাই গাইছে, কাতার এটিকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ এবং ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ বলে অভিহিত করেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি সতর্ক করে বলেছেন, এই হামলা দোহাকে কেন্দ্র করে চলমান শান্তি আলোচনাকে গুরুতরভাবে ব্যাহত করতে পারে।
ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে হামাসকে দুর্বল করা একটি যৌক্তিক লক্ষ্য, কিন্তু কাতারের ভেতরে এ ধরনের আক্রমণ অগ্রহণযোগ্য, কারণ দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান অ-ন্যাটো মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি আল-উদেদের স্বাগতিক। সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এর ফলে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাত নিরসনে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন আলোচনার প্রচেষ্টা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
হামাস জানিয়েছে, দোহায় চালানো এই হামলায় তাদের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে রাজনৈতিক ব্যুরোর আলোচক খলিল আল-হায়্যার ছেলে অন্তর্ভুক্ত। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি আলোচনার মূল ব্যক্তিদের হত্যা করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে কাতার জানিয়েছে, তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, মার্কিন সেনারা আগে থেকেই হামলার একটি সতর্কবার্তা পেয়েছিল, তবে ইসরায়েল তা আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বয় করেছে কিনা তা পরিষ্কার নয়। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র কাতারে এ ধরনের একতরফা হামলা, যারা শান্তির ঝুঁকি নিতে সাহস দেখিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে পারে না।’
কাতারের প্রধানমন্ত্রী আল-থানি বলেন, হামলার আগে কোনো সতর্কবার্তা তারা পাননি, বরং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার সময় মার্কিন কর্মকর্তাদের ফোন আসে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘কাতার এই নির্লজ্জ হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে।’ ট্রাম্প পরে কাতারের আমিরকে ফোনে আশ্বস্ত করেছেন যে, ভবিষ্যতে তাদের ভূখণ্ডে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও কথা বলেছেন।
রয়টার্সকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল দাবি করেছে, হামলাটি শীর্ষ হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। তবে তারা নিহত হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েল হামলার আগে মার্কিন সেনাদের জানিয়েছিল, কিন্তু কোনো সমন্বয় বা অনুমোদন ছিল না।
এই আক্রমণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড জেরুজালেমের উপকণ্ঠে এক বন্দুক হামলার দায় স্বীকার করেছিল, যেখানে ছয়জন নিহত হন। নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘সন্ত্রাসী নেতাদের সুরক্ষা দেওয়ার দিন শেষ।’ তিনি জানান, জেরুজালেম হামলা এবং গাজায় চার সেনার নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবেই কাতারে এ হামলা চালানো হয়েছে।
তবে বিশ্বজুড়ে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এটিকে ‘নির্লজ্জ ও কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়েছে। পোপ লিও বলেছেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর।’ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং কাতারের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরের সামরিক অভিযানে ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গবেষক ও অধিকারকর্মীরা একে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতিমধ্যেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
সূত্র: রয়টার্স