
গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলি হামলার পরবেঁচে যাওয়া একজন ঊর্ধ্বতন হামাস কর্মকর্তা প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। তিনি হামলার মুহূর্ত এবং কর্মকর্তারা কীভাবে পালাতে সক্ষম হয়েছিল, তা বর্ণনা করেছেন।
হামাস নেতা গাজি হামাদ আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা একটি বৈঠকে ছিলাম, আলোচক প্রতিনিধিদল এবং কিছু উপদেষ্টা ছিল। কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পাওয়া আমেরিকান প্রস্তাব পর্যালোচনা শুরু করার এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আমরা জোরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থল ত্যাগ করলাম, কারণ আমরা শুরু থেকেই জানতাম যে, বিস্ফোরণগুলো ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ। আমরা গাজায় বাস করেছি এবং এর আগেও ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।’
ইসরায়েল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনটির নেতাদের ওপর হামলার সময় পাঁচ জন হামাস সদস্য এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। যাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া যুদ্ধবিরতি এবং বন্দীদের মুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় যুক্ত ছিলেন।
গাজি হামাদ বলছিলেন, ‘গোলাবর্ষণ এত তীব্র ছিল, পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। রকেটগুলো অবিরামভাবে আঘাত করছিল। এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ১২টি রকেট আঘাত হেনেছিল। কিন্তু আল্লাহর আদেশে… আমরা এই আগ্রাসন থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম।’
হামাস জানিয়েছে, তাদের জ্যেষ্ঠ নেতারা বোমা হামলায় বেঁচে গেছেন। ট্রাম্প ইসরায়েলি এ হামলায় ‘খুবই অসন্তুষ্ট’ বলে জানিয়েছেন। গত সোমবারও তিনি একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, ইসরায়েল কাতারের ওপর আর কোনো আক্রমণ চালানো থেকে বিরত থাকবে।
কাতারের ওপর প্রথমবার ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা দোহায় একটি জরুরি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য একত্রিত হন। সেখানে তারা ইসরায়েলের ‘কাপুরুষোচিত’ হামলার নিন্দা জানান। তবে বাস্তব কোনো পদক্ষেপ ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছিল।
হামাদ আল জাজিরাকে বলেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময় হামাসের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল না।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার শিশু রয়েছে।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের একটি তদন্তে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ একটি গণহত্যা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কয়েকটি প্রধান মানবাধিকার সংগঠনও একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।