
চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় লিওনেল মেসির তিন দিনের ভারত সফর। সফরের প্রথম দিনে কলকাতার সল্ট লেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে আয়োজকদের ব্যর্থতায় মেসিকে দেখতেই পাননি দর্শকরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্টেডিয়ামে ভাঙচুর চালান ফুটবলভক্তরা।
হাজার-হাজার টাকা খরচ করে মেসিকে দেখতে যুবভারতী স্টেডিয়ামে এসেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। তবে মেসিকে ঘিরে জটলার কারণে গ্যালারি থেকে ঠিকভাবে দেখতেই পায়নি কেউ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্টেডিয়ামে ভাঙচুর চালিয়েছেন দর্শকরা।
শুধু তাই নয়, বেষ্টনী ভেঙে মাঠে ঢুকেছেন এবং কার্পেট, চেয়ার, ফুলের টব থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস লুটও করেছেন। এমন বাজে পরিস্থিতির জন্য মেসিকে ভারতে আনার মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে আটকও করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) মেসির আগমণ ঘিরে বেশ উৎসবমূখর পরিবেশ ছিল কলকাতায়। হঠাৎ সেই উৎসব গণ্ডগলে রূপ নিলো কেন, তা তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এছাড়া এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি কেন ঘটেছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মেসিকে ‘দখলে’ নিতে চেয়ে দুই মন্ত্রীর কাড়াকাড়িতেই বেঁধেছে বিপত্তি। এ ছাড়া ‘ভিআইপি’ হিসেবে অনুষ্ঠানে আগত অভিনেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের ভিড়ই গ্যালারির দর্শকদের মেসিকে দেখতে পাননি গ্যালারিতে থাকা ফুটবলপ্রেমীরা।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে লিখেছে, মেসিকে নিয়ে দুই মন্ত্রীর লড়াই দিয়ে বিশৃঙ্খলার শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মেসিকে ‘দখলে’ নেওয়ার লড়াই থেকে যুবভারতীতে বিপত্তি ঘটেছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে কলকাতায় এসে পৌঁছান মেসি। এর পর থেকেই নাকি আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফুটবলারকে ঘিরে দুই মন্ত্রীর মধ্যে লড়াইয়ের শুরু। আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, মেসি কলকাতা বিমানবন্দরে পা রাখার পরই তাকে নিজের ‘দখলে’ নিয়ে ফেলেছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত।
মেসি কলকাতায় উঠেছিলেন হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে। সেখানে মেসিকে ঘিরে ছিল দমকলমন্ত্রীর লোকজনই। এখানে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। সেই হোটেলে সুজিত সপরিবার ছিলেন; ছিলেন তার পছন্দের লোকজনও। নিজের ক্লাব শ্রীভূমির সামনে মেসির ৭০ ফুটের মূর্তি উন্মোচন করানো থেকে বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকার সঙ্গে আলাপচারিতা, সবখানেই সুজিত সক্রিয় ছিলেন।
তবে মেসি মাঠে ঢুকতেই ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ ও তার লোকজন তাকে ঘিরে ফেলে। সেখানে ছিলেন উদ্যোক্তাদের অনেকে এবং কলকাতার মাঠের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা, ফুটবলার এবং টালিউডের পরিচিত মুখেরা। মেসি যে মিনিট বিশেক মাঠে ছিলেন তার পুরোটা সময়ে তাঁকে ঘিরে ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রীর লোকজন। এতে যার জন্য হাজার-হাজার টাকা খরচ করে মাঠে আসা, সেই মেসিই দেখতে পাননি দর্শকরা।
ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, গণ্ডগলে অন্যতম কারণ নিয়ন্ত্রণহীন ভিআইপি সংস্কৃতি। মেসি মাঠে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি ও আলোকচিত্রীর ভিড়ে ঘিরে পড়েন। ফলে তিনি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে বা গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ বলতে গেলে পানইনি।