
দেশের ফুটবলের করুণ চিত্রই ফুটে উঠলো। বাংলাদেশের ফুটবলে এমন চিত্র কবে কখন কে দেখেছেন মনে করতে পারবেন না। দুই দল মাঠে গিয়ে নামতে পারছিল না মাঠ প্রস্তুত না হওয়ার কারণে। ফুটবল মৌসুমের প্রথম খেলা। কুমিল্লায় এক ম্যাচের চ্যালেঞ্জ কাপ ফুটবল দিয়ে মৌসুম শুরু হবে। মোহামেডান-বসুন্ধরা কিংস খেলবে। এক ম্যাচের লড়াই, যে জিতবে চ্যাম্পিয়ন, ইউরোপীয়ান ফুটবলের দেখাদেখি নকল করতে গিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে এটি চালু করা হয়েছে।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে চ্যালেঞ্জ কাপের ম্যাচ। মোহামেডান-বসুন্ধরা কিংস খেলতে নামলো ১১ মিনিট পর। নামতে হলো বাফুফের কর্তাদের অদূরদর্শিতায়। লজ্জাজনক ঘটনাই ঘটিয়ে দিলেন বাফুফের কর্তারা। কুমিল্লায় দুই দল মাঠে নেমে অপেক্ষা করলো। মাঠ তখনো প্রস্তুত হয়নি। রেফারি, সহকারী রেফারিরা মাঠে গিয়ে দেখলেন তখনো মাঠের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। দুই দল অনুশীলন করে অপেক্ষায় রয়েছে কিন্তু খেলা শুরু করতে পারছেন রেফারি।

কারণ মাঠে চুন দেওয়ার কাজ শেষ হয়নি। মাঠের মধ্যখানে কিকঅফ স্পটও মার্ক করা হয়নি। গোলপোস্টে নেট লাগানো হয়নি। একটু পর খেলা শুরু হওয়ার কথা তখনো ঘাস কাটার কাজ চলছে। রং ওঠে গোপলপোস্টের চেহারা ক্ষত-বিক্ষত। দুই গোপলপোস্টে দাঁড়িয়ে গোলরক্ষক নিজেদেরকে প্রস্তুত করবেন, সেটা করতে পারছিলেন না। টাচ লাইন থেকে থ্রো করতে গেলে খেলোয়াড়ের পা ঘাসে ডুবে যায়। এক কথায় যে কেউ মাঠের এমন চিত্র দেখলে অবাক হয়ে যাবেন। মাঠে প্লেইং গ্রাউন্ডে বড় বড় ঘাস। চাট লাইনের বাইরে হাঁটু সমান ঘাস। পুরো মাঠই খেলার অনুপোযুক্ত।
মোহামেডানের ভেন্যু কুমিল্লার মাঠ। এক ম্যাচের টুর্নামেন্ট বাফুফের। মৌসুমের প্রথম খেলা, স্বাভাবিকভাবেই বাফুফে খোঁজখবর নিবে ভেন্যু ঠিকঠাক আছে কি না। কোথাও প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে সেটি সংশ্লিষ্ট ক্লাবকে দিয়ে করিয়ে নেবে। এটাই অভিভাবক হিসেবে বাফুফের কর্তব্য। কিন্তু প্রথম টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে খেলোয়াড়রা মাঠে নেমে দেখলেন মাঠের কোনো পরিচর্যাই হয়নি। মাঠ প্রস্তুতির কাজ করছেন কর্মীরা। খেলা শুরু হতে ১১ মিনিট কেটে গেল।

গ্রামগঞ্জের ফুটবলে সেটি হতে পারে। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা হতে কী করে বুঝা গেল না। ১১ মিনিট দেরিতে খেলা শুরু করার রেকর্ড করাটাই বোধহয় বাকি ছিল। গতকালকের চিত্র দেখে কুমিল্লার মানুষ জেনে গেছে বাফুফের কর্তারা যদি থাকেন এসি রুমে, মাঠের খেয়াল কে রাখবে। এখনকার কর্মকর্তারা এমনই হয়।
আগের কর্মকর্তারা নিজে মাঠে গিয়ে দেখতেন। মাঠে হাঁটতেন। মাঠের কোথায় কী সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিজে খুঁজে বের করতেন। ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে খেলা শেষ হয়ে দর্শকের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ভাবনায় থাকতেন সংগঠকরা। কোথায় পোড়খাওয়া সেসব ফুটবল সংগঠক। বাফুফে বলতে পারে মাঠ প্রস্তুত করার কথা তাদের না, ভেন্যু যাদের দায়িত্ব তাদের। বাফুফে এ কথা বলতে পারে। ফিফা যেসব দেশকে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করতে দেয়, তারা নিজেরা সব কাজের তদারকি করে। দায়িত্ব দিয়ে ফিফা ঘুমিয়ে থাকে না। মৌসুমের প্রথম খেলায় বাফুফের অদূরদর্শিতায় যা ঘটলো পৃথিবীর কোথাও এমন ঘটনা দেখা যায় না।

বসুন্ধরা কিংস ৪-১ গোলে মোহামেডানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খেলা শেষে পুরস্কার দিতে বিশাল মঞ্চ স্থাপন করেছিল বাফুফে। সেই মঞ্চে বাফুফের দুই একজন কর্মকর্তাকে দেখা গেল চিরুনি দিয়ে চুল গুছিয়ে নিচ্ছেন। অথচ খেলা শুরু হওয়ার আগে মাঠটাকে গুছিয়ে তোলার দায়িত্ব তার বা তাদের ওপরও বর্তায় সেটি ভুলে যান তারা।