
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনের প্রতিবাদে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা রাজধানীর রাস্তায় নেমে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানান। খবর রয়টার্সের।
ট্রাম্প শুধু ডিসিতেই নয়, অন্যান্য ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহরেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি শিকাগোকে লক্ষ্য করে ভিয়েতনাম যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র অ্যাপোক্যালিপস নাউ এর একটি প্যারোডি ছবি ব্যবহার করে অভিবাসী বহিষ্কারের বার্তা দেন।
‘আমরা সবাই ডিসি’ নামের এই মিছিলে অবৈধ অভিবাসী এবং ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকারীরা যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেন— ‘ট্রাম্পকে এখনই চলে যেতে হবে’, ‘ডিসি মুক্ত করো’ এবং ‘স্বৈরাচারিতার প্রতিরোধ করো।’ অংশগ্রহণকারী অ্যালেক্স লাউফার বলেন, ‘আমি ডিসির দখলদারিত্বের প্রতিবাদে এসেছি। আমাদের রাস্তায় ফেডারেল পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডের কোনো স্থান নেই।’
গত মাসে ট্রাম্প রাজধানীতে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন, যুক্তি দেখান ‘আইন, শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা’র প্রয়োজনীয়তা। এতে মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ সরাসরি ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে আসে এবং অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থার (আইসিই) সদস্যরা শহরে টহল শুরু করে। সমালোচকরা এই পদক্ষেপকে ফেডারেল ক্ষমতার অপব্যবহার বলে নিন্দা করেছেন।
তবে বিচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ডিসিতে সহিংস অপরাধ গত তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। ডিসি একটি স্বশাসিত ফেডারেল জেলা হলেও ন্যাশনাল গার্ড সরাসরি প্রেসিডেন্টের অধীনে থাকে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, তিনি শিকাগোতেও অপরাধ দমনে ন্যাশনাল গার্ড পাঠাবেন। ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার জানান, প্রশাসন ইতোমধ্যেই সামরিক যান সংগ্রহ করেছে এবং অতিরিক্ত আইসিই এজেন্ট পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।
অন্যদিকে, আরেক বিক্ষোভকারী ক্যাসি বলেন, ‘তারা ডিসিতে যা করছে, তা একনায়কতন্ত্রের মতো। এখান থেকে শুরু করে তারা অন্য এলাকায়ও এটি প্রয়োগ করবে। তাই এখনই আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ বর্তমানে ছয়টি রিপাবলিকান-শাসিত রাজ্য থেকে দুই হাজারের বেশি সেনা ডিসিতে মোতায়েন রয়েছে। তাদের মিশন কবে শেষ হবে তা স্পষ্ট নয়, যদিও সেনাবাহিনী ডিসি ন্যাশনাল গার্ডের মেয়াদ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
এদিকে, ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান শওয়াল্ব সেনা মোতায়েনকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। যদিও কিছু বাসিন্দা ন্যাশনাল গার্ডের উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বিশেষ করে অপরাধপ্রবণ এলাকায় তাদের টহল অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। গার্ড সদস্যদের বেশিরভাগকে শহরের কেন্দ্রস্থল ও পর্যটন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
ডিসির মেয়র মুরিয়েল বোসার ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেও আশা প্রকাশ করেছেন যে, ন্যাশনাল গার্ডের মিশন দ্রুত শেষ হবে। তার মতে, এ পদক্ষেপের পর গাড়ি ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ কমেছে।
শনিবার যখন বিক্ষোভকারীরা হোয়াইট হাউসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ট্রাম্প সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে তিনি শিকাগোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেন। এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি সকালে বহিষ্কারের গন্ধ ভালোবাসি’—যা জনপ্রিয় এক চলচ্চিত্রের সংলাপকে ব্যঙ্গ করে ব্যবহার করা হয়। পোস্টের সঙ্গে যুক্ত ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি একটি ছবি, যেখানে ট্রাম্পকে সামরিক পোশাকে দেখানো হয়েছে এবং পটভূমিতে বিস্ফোরণ ও হেলিকপ্টার গানশিপ দৃশ্যমান।