
ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান শওয়াল্ব প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিষয়ে ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। তার অভিযোগ, রাজধানীতে সেনা মোতায়েন মূলত একটি ‘অনিচ্ছাকৃত সামরিক দখলদারি’ এবং অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে এটি মার্কিন সংবিধান ও ফেডারেল আইন ভঙ্গ করছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) শওয়াল্ব তার মামলায় যুক্তি দিয়েছেন, প্রায় ২,৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয়েছে এবং তাদের মার্কিন মার্শাল সার্ভিসের মাধ্যমে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় আইন প্রয়োগে সামরিক হস্তক্ষেপের মৌলিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে এবং হোম রুল অ্যাক্টে নিশ্চিত শহরের স্বায়ত্তশাসনও ক্ষুণ্ন করেছে।
তার ৫২ পৃষ্ঠার আবেদনে শওয়াল্ব আরও উল্লেখ করেন, এই সেনা মোতায়েন রাজধানীর নাগরিক ও পুলিশের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক দুর্বল করছে এবং অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তার ভাষায়, ‘ওয়াশিংটনে সেনা টহল গণতন্ত্রের একটি মৌলিক নীতি উপেক্ষা করছে—যেখানে অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগে সামরিক বাহিনীর কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়।’
শওয়াল্ব জানান, সাতটি অঙ্গরাজ্য ও কলম্বিয়া ডিস্ট্রিক্ট থেকে আসা দুই হাজার দুই শতাধিক ন্যাশনাল গার্ড সদস্য সামরিক পোশাকে রাইফেল হাতে এবং সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে রাস্তায় টহল দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ তাদের অতিরিক্ত আইন প্রয়োগের ক্ষমতাও দিয়েছে, যার মধ্যে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের মতো কর্তৃত্ব অন্তর্ভুক্ত। অথচ ডিসির কোনো বাসিন্দা বা স্থানীয় প্রশাসন এই সহায়তা চায়নি।
আইন অনুযায়ী, ফেডারেল পর্যায়ে এ ধরনের সেনা মোতায়েন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য কার্যকর থাকতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত ‘অপরাধ জরুরি অবস্থা’র আওতায় চলমান এ মোতায়েনের মেয়াদ ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে, যদি না কংগ্রেস এর মেয়াদ বাড়ায়। এর আগে একই ইস্যুতে শওয়াল্ব ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মোতায়েনের ফলে রাজধানীতে গ্রেফতার বেড়েছে এবং তুলনামূলক ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রেও গুরুতর ফেডারেল অভিযোগ আনা হচ্ছে।
একটি সাম্প্রতিক ঘটনায়, একজন ব্যক্তি সেনা মোতায়েনের প্রতিবাদে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার দিকে স্যান্ডউইচ ছুড়ে মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে গ্র্যান্ড জুরি ওই ঘটনায় ফৌজদারি অভিযোগ আনতে অস্বীকৃতি জানায়। সমালোচকরা বলছেন, মোতায়েনের আসল উদ্দেশ্য অপরাধ দমন নয়; বরং অনেক সেনাকে পাতা পরিষ্কার, আবর্জনা সরানো কিংবা গৃহহীনদের ক্যাম্প উচ্ছেদের মতো কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে।
তীব্র সমালোচনার মাঝেও ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসির অভিজ্ঞতাকে ‘সফল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং শিকাগো ও বাল্টিমোর শহরেও একই ধরনের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পরিকল্পনা করছেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান