
এবারের ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে ফিলিস্তিনের পতাকাতলে একমাত্র অ্যাথলেট মোহাম্মদ ইয়াহিয়া সুলেমান দোয়াদার। ৮০০ মিটার লড়াইয়ে খেলতে এসেছেন। ইভেন্টের হিটে অষ্টম স্থান অর্জন করেছেন, ১ মিনিট ৫৩.৬৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে তিনি সবার শেষে ফিনিশ লাইন অতিক্রম করেন। তবে ইভেন্ট শেষে খেলার গল্পের চেয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যার রোমহর্ষক কথাগুলো শুনলেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
নিজের ক্যাডস কেনার ক্ষমতা নেই। ভালো কোনো কাপড়ও নেই। এসব কথা তুলে ধরলেন দোয়াদার। অনুশীলন করতে পারেননি তার দেশে। নিজের চোখে দেখে এসেছেন ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশ, যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে তা কেউ চোখে না দেখলে উপলব্ধি করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী এই স্প্রিন্টার। ইভেন্ট শেষে মিকসড জোনে কথা বলছিলেন দোয়াদার। তার কথার কোনো জবাব দিতে পারছিলেন না আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম তার গায়ে ফিলিস্তিনের জার্সি দেখে নীরবে সরে গেছেন। কথাও বলতে আসেননি। কমতে কমতে হাতে গোনো এক-দুই জন ছিল দোয়াদারের সামনে। তিনি জানিয়েছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে খেলা তো দূরের কথা, মানুষকে বাঁচানোই অসম্ভব হয়ে গেছে। সেখানে আমি কী করে খেলবো। আমি জানি না আমার দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে।’
জাপানে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসকে ঘিরে বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটরা যেখানে কয়েক মাস ধরে নিজেদের প্রস্তুত করেছে সেখানে দোয়াদার মাত্র দুই সপ্তাহের অনুশীলন করে এসেছেন। বলতে গেলে এই অনুশীলনে কিছুই হয় না। তাই নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুব বেশি কথা বলেননি তিনি। মনে করছেন আরও সময় পেলে ভালো কিছু করতে পারবেন। তার স্বপ্ন রয়েছে ফিলিস্তিনের পতাকায় পদক জেতারও। বলেন, ‘সুযোগ পেলে আমি উন্নতি করতে পারবো, আমি পারবো ট্রাকে পরিশ্রম করতে। সবকিছু ঠিকমতো হলে আমি ফিলিস্তিনের জন্য একটি পদক জিতবো।’
সাধারণত খেলার কথা বলতে গিয়ে অন্যদের মুখে হাসি লেগে থাকে। কিন্তু ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট দোয়াদারের কথা বলতেই যেন কষ্ট হচ্ছিল। এই টুর্নামেন্টে টোকিও আসার আগে জার্মানির একটি ট্রেকে অনুশীলন করেছেন। তবে তার আগে সারা বছর মৃত্যু আতঙ্ক নিয়েই নিজের জন্মস্থান জেরিকোর বিভিন্ন সড়কে অনুশীলন করেন। নিজ দেশে নিজেদের অবস্থার কথা জানিয়ে এই অ্যাথলেট বলেন, ‘আমরা খেলবো কী। আমাদের ঘরবাড়ির ঠিক নেই। আমরা কখন বেঁচে আছি আর কখন মরে যাবো, কেউ বলতে পারি না। রাতে ঘুম হয় না। মনের মধ্যে সারাক্ষণ ভয় ঘুরতে থাকে, কখন কাছের মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাই। এখন তো পুরো দেশের মানুষই আমাদের কাছে মানুষ। একজন আরেক জনের কাছের মানুষ আমরা।’
এর আগে গত বছর প্যারিস অলিম্পিকে ফিলিস্তিনের থেকে অংশ নিয়েছিল মাত্র চার জন ক্রীড়াবিদ। তাদের মধ্যে এক জন ছিলেন দোয়াদার। তবে টোকিওতে তিনি এসেছেন একাই। চোখেমুখে যেন তার একটি বার্তা মুক্ত হতে চান তিনি, মুক্ত করতে চান তার দেশকে। বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনের শিশুদের অনেক স্বপ্ন আছে, সেখানেও অনেক প্রতিভার জন্ম হয়। আমার স্বপ্ন হলো আমরা যেন মুক্ত হই, আমাদের দেশের সব মানুষ যেন মুক্ত হয়।’