
ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ, অ্যাথলেটিকসের বিশ্বকাপ। জাপান অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আজ উদ্বোধন হবে। একদিন আগেও প্রস্তুতি চলছে। অ্যাথলেটরা অনুশীলনে ব্যস্ত। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, জামাইকাসহ অনেক দেশের অ্যাথলেটদের দেখা গেল অনুশীলনে। লংজাম্প, হাই জাম্প ট্র্যাকে জামাইকান অ্যাথলেটরা।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেটরা অন্য পাশে। অস্ট্রেলিয়ান অ্যাথলেটরা অনুশীলন শেষ করে কথা বলছেন। জ্যান্ডলিং এরিয়াতে সব সাংবাদিক ঘিরে ধরেছেন হারুকা কিতাগুচিকে। এই নারী থ্রোয়ার ১ বছর আগে প্যারিস অলিম্পিক গেমসে সোনার পদক জয় করেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাকে ঘিরে সংবাদমাধ্যম। অন্যদিকে স্টেডিয়ামের ভেতের টেকনিশিয়ানরা লাইট ক্যামেরা স্থাপনে ব্যস্ত।
৯ দিনের ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে পৃথিবীর চোখ থাকবে। অ্যাথলেট প্রিয়দের। আজ থেকে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস দেখবে নতুন নতুন রেকর্ড, ভাঙা-গড়ার রেকর্ড, আর নতুন প্রতীভার খোঁজ দেবে, নতুন তারকার জন্ম দেবে মাদার অব গেমস খ্যাত ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস।
২০১৯ সালে করোনা পৃথিবী ওলট-পালট করে দিয়েছিল। ইংল্যান্ড এগিয়ে এসে বললো জাপান ২০২০ টোকিও অলিম্পিক গেমস আয়োজন করতে পারবেনা। ইংল্যান্ড প্রস্তুত রয়েছে, আয়োজন করতে পারবে। কথাটা জাপানের গায়ে লাগলো। পরিশ্রমী জাতি হিসাবে পুরো পৃথিবীতে যারা মর্যাদার আসনে বসে আছেন তারা ব্যর্থ হবেন, সেটা মেনে নিতে পারলেন না। চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করা হয়েছিল ২০২১ সালে, জাপান জাতীয় স্টেডিয়ামে হয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তার পর থেকে এই স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক কোনো খেলা হয়নি সম্পূর্ণ নতুন করে নির্মিত এই স্টেডিয়ামে।
প্রায় ৫ বছর পর জাপান জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজ। অ্যাথলেটরা যখন স্টেডিয়ামের ভেতরে অনুশীলনে ব্যস্ত তখন স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতি, সাবেক স্বর্ণ জয়ী অ্যাথলেট সাবেস্তিয়ান কো এবং জাপান অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের নারী সভাপতি সাবেক অ্যাথলেট ইউকো আরিমোরি, ম্যারাথনে দুইবারের অলিম্পিক পদক জয়ী তিনি। তাদের কণ্ঠে উঠে আসল এবারের ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস জাপানের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
পুরোনো স্টেডিয়ামটি ভেঙে ২০২০ অলিম্পিক গেমস কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে নতুন করে নির্মাণ করা হয় জাপান জাতীয় স্টেডিয়াম। কিন্তু টোকিও অলিম্পিক গেমস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শক ছিল না। কোভিডের কারণে ফাঁকা গ্যালারি রাখা হয়েছিল। অলিম্পিক গেমসের ফ্লাইটগুলো সহজে প্রবেশ করলেও গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় ছাড়া কোনো ফ্লাইট ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন। করোনার কারণে কোনো ভেন্যুতেই দর্শক ঢুকতে দেওয়া হয়নি, লকডাউন করে রাখা হয়েছিল। বিদেশি কিছু সাংবাদিক এলেও বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক টোকিও অলিম্পিক গেমস কাভার করতে আসেননি।
আয়োজক জাপান বাংলাদেশের সাংবাদিকদেরকে খেলা কাভার করতে এমন কিছু শর্ত দিয়েছিল যা মেনে নিলে হোটেল রুমে বসে গেমস কাভার করতে হতো। সেবার ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জয় করেছিলেন ইতালিয়ান মার্সেল জ্যাকবস। অলিম্পিক গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জয় করলে পুরো স্টেডিয়াম কেঁপে ওঠার কথা। সেখানে জ্যাকব তার ঘাড়ে ইতালিয়ান জাতীয় পতাকা রেখে একা একা উৎসব করলেন, দর্শক শূন্য নীরব স্টেডিয়ামে।
জাপান জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রায় ৫ বছর পর আবার দর্শক ভরে উঠবে। অলিম্পিক গেমসের পর কোনো খেলাও আয়োজন করতে পারেনি ৬৭ হাজার ৭৫০ হাজার দর্শকের স্টেডিয়ামে। এবার এসেছেন প্যারিস অলিম্পিক অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্বর্ণ জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের নোয়া লাইলস। ধরে নেওয়া হচ্ছে নোয়া লাইসল যখন স্বর্ণ জয় করবেন তখন গোটা স্টেডিয়ামে গর্জন করে উঠবে। নীরবতা ভাঙবে জাপান জাতীয় স্টেডিয়াম।
নতুন স্টেডিয়ামে আজ প্রথম বসতে যাচ্ছেন জাপানিরা। আয়োজক জাপান অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে ২০তম ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসকে কেন্দ্র করে তাদের আগামী প্রজন্ম প্রযুক্তির মধ্যে ডুবে না থেকে খেলার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে।