
এসএমই খাতকে জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি পর পর চারটি বৈঠক করেছে বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি।
শনিবার (১ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকগুলোতে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
বাস্তবায়িত সিদ্ধান্তসমূহ:
- বৈদেশিক অর্ডার থেকে প্রাপ্ত অর্থের ১০% বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম নীতিমালা থেকে অপসারণ।
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বছরে ন্যূনতম ৩,০০০ মার্কিন ডলারের পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা কোটা বরাদ্দের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রেরণ।
৯ অক্টোবরের বৈঠকে গৃহীত চারটি সিদ্ধান্ত:
১. নতুন ফিনান্সিয়াল প্রোডাক্ট ডিজাইন: এসএমই ফাউন্ডেশন ও এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট (এসএমইএসপিডি) যৌথভাবে চলতি মূলধন বা এসএমই-বান্ধব প্রোডাক্ট ডিজাইন করবে।
২. নীতিমালার কার্যকারিতা মূল্যায়ন: এসএমই মাস্টার সার্কুলারের পারফর্ম্যান্স ইভ্যালুয়েশন করা হবে।
৩. ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ঋণ প্রদানের সম্ভাব্যতা যাচাই।
৪. সুদের হার পুনর্বিবেচনা: ব্যাংক রিফাইন্যান্সিং স্কিমকে আকর্ষণীয় করতে গ্রাহক পর্যায়ের সুদের হার সমন্বয় করা সম্ভব কিনা তা দেখানো হবে।
আগের বৈঠক ও উদ্যোগের ধারাবাহিকতা
২৮ আগস্টে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পেমেন্ট, কাস্টমস, লাইসেন্স, লোন ইত্যাদি বিষয়ে এসএমই খাতের চ্যালেঞ্জ আলোচনা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর, এসএমই ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে দুই ঘণ্টার বৈঠকে উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাব শোনা হয়। ৮ অক্টোবর অনলাইনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এসএমই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়।
বাস্তবায়নাধীন অন্যান্য সিদ্ধান্তসমূহ:
- স্যাম্পল ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করতে এনবিআরের মনিটরিং জোরদার।
- ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে অর্থপ্রাপ্তিতে উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধা প্রদান।
- অনলাইন বিক্রির অর্থ দ্রুত উদ্যোক্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা।
- অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে রপ্তানিতে B2B ও B2C মডেল অন্তর্ভুক্ত।
- এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিমালা প্রচারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম।
- বিশেষ Foreign Currency / Endorsement Card চালুর প্রস্তাব।
- আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ক্লায়েন্টদের জন্য এসএমই খাত বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ।
- বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে রপ্তানি SOP বাস্তবায়নে সমন্বয়।
- এগ্রো-অর্গানিক সার্টিফিকেট ইস্যু সমাধান।
- ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই আগাম পেমেন্ট ও ERQ অ্যাকাউন্ট সীমা বৃদ্ধি।
- স্থানীয় বীমা কোম্পানির কভারেজসহ ওপেন অ্যাকাউন্টে রপ্তানি লেনদেনের অনুমোদন।
- ব্যবসায়ীদের ট্রেড পেমেন্ট পদ্ধতি সহজভাবে প্রদর্শনের জন্য ফ্লোচার্ট প্রকাশ।
- এনবিআরের HS Code সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, প্রথম ৪ ডিজিট মিললে শুল্কায়ন সম্পন্ন হবে।
বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিতে গতিশীলতা বৃদ্ধি করা। এসএমই খাত অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে। উদ্যোক্তাদের ব্যবসা প্রতিটি পর্যায়ে সহজতর করতে সরকারকে সহায়ক হতে হবে, বাধা নয়।”