
মাত্র তিন দশক আগে দেশে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার সংখ্যা ছিল বছরে গড়ে মাত্র ১০ থেকে ১৫টি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে এ সংখ্যা ১৩৭টি। ২০৩১ সাল নাগাদ ডিম খাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বছরে জনপ্রতি ১৬৫টি। ডিমকে বলা হয় ‘গরিবের প্রোটিন’। কারণ, এই এক ডিমেই রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ১৩টি পুষ্টিগুণ।
আজ শুক্রবার বিশ্ব ‘ডিম দিবস’। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠন, সর্বোপরি ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সাল থেকে অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব জুড়ে এ দিবসটি পালন করা হয়। এবারের ডিম দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘শক্তিশালী ডিম, প্রাকৃতিক পুষ্টিতে ভরপুর’।
প্রতি বছরের মতো এবারও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) যৌথভাবে দিবসটি উদ্যাপনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কেআইবি) এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এর আগে সকাল ৯টায় দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে একটি শোভাযাত্রা কেআইবি থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ঘুরে পুনরায় খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শেষ হবে।
এছাড়া, ডিমের গুণাগুণসংবলিত পোস্টার ছাপানো এবং সেগুলো উন্মুক্ত স্থানে লাগানো। বিভিন্ন এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমে ডিম বিতরণ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সিদ্ধ ডিম বিতরণ করা হবে। ডিম উত্পাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বাস্থ্যগত দিকের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও ডিম বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য। দেশের লাখো প্রান্তিক খামারি পরিবার ডিম উত্পাদনের সঙ্গে জড়িত। গত এক দশকে ডিম উত্পাদনে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ডিম উত্পাদন হয়েছে ২৪৪০ কোটি, যা এক দশক আগের তুলনায় প্রায় ২.১৬ গুণ বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ অর্থবছরের ডিমের উত্পাদন প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১,৪৯৩.৩১ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্বছরে ১,৫৫২ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১,৭১১ কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১,৭৩৬ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২,০৫৭.৬৪ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২,৩৩৫.৩৫ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২,৩৩৭.৬৩ কোটি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২,৩৭৪.৯৭ কোটি এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৪৪০ কোটি ডিম উত্পাদিত হয়েছে।
বর্তমানে পোলট্রি শিল্প বিকাশে অন্যতম প্রধান অন্তরায় হচ্ছে পোলট্রি ফিডের উচ্চমূল্য। এ কারণে অনেক প্রান্তিক পোলট্রি খামারিকে ব্যবসায় টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পোলট্রি ফিডের মূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ যৌথভাবে কাজ করছে। এছাড়া, খামারিদের উত্পাদন ব্যয় কমাতে বিদ্যুত্ বিলে কৃষির ন্যায় ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুত্ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে সারা বছরব্যাপী সুলভ মূল্যে নিরাপদ ডিম সরবরাহের জন্য সংরক্ষণাগার স্থাপনের লক্ষ্যে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।