
ঢাকা থেকে হংকংয়ের বিমানে উঠে শান্তি পাওয়ার কথা না বাংলাদেশ ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার। বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে এতদিনের চাপা কথাটা মুখ থেকে বের করে দিয়েছেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। দিনের পর দিন বেঞ্চে বসিয়ে রাখায় চাপা ক্ষোভটা বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ-হংকং ম্যাচে ৪-৩ গোলে হারের পরদিন। কোচ বিমানবন্দরের ভেতরে, বাইরে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ দলের একাদশে খেলতে চান।
এই জামাল এতদিন বলে এসেছেন, কাকে খেলাবেন সেটি কোচ সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই জামাল নিজেই বলেছেন, তারা একাদশে খেলতে চান। কোচকে বুঝিয়ে দিতেই জামালের জমানো ক্ষোভ বেরিয়ে এসেছে হাসিমুখে। জামালের কথায় পরিষ্কার, কোচ যেভাবে দল গঠন করেন, একাদশ গঠন করেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। একজন অভিজ্ঞ ফুটবলার হিসেবে সেটি মেনে নিতে পারেন না। সময় এসেছে কথা বলার। মুখ খুললেন জামাল। এই জামালকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলানো হয়। কোচ হ্যাভিয়ের সংবাদ সম্মেলনে জামালকে নিয়ে আসতেন। জানা গেছে, এটা ছিল তার কৌশল।
জামালের মুখ বন্ধ রাখতেই নাকি এটা করে গেছেন। সব সময় অধিনায়ককে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করতে হবে এটা বিশ্বকাপেও কেউ করে না। কিন্তু হ্যাভিয়ের কাবরেরার দলের এত ফুটবলার থাকার পরও সংবাদ সম্মেলনে জামাল ভূঁইয়াকে হাজির করতেন। জামালও দল নিয়ে, প্রতিপক্ষ নিয়ে কথা বলতেন। কোথায় কী সমস্যা, কোথায় কী সুবিধা, সবকিছুর উত্তর দিতেন তিনি। কিন্তু নিজের খেলার ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উঠলেই জামালের পুরোনো জবাব ‘কোচ নির্ধারণ করবেন কাকে খেলাবেন। কোচ যেটা ভালো করবেন, সেটাই হবে।’ হংকং ম্যাচের আগে ম্যাচ প্রিভিউ সংবাদ সম্মেলনে জামাল ইস্যুতে কোচ বলেন, ‘খেলুক না খেলুক জামালই অধিনায়ক।’
ক্লাব ফুটবলে খেলা বসুন্ধরা কিংসের দুই সোহেল রানা ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে তুলে নিয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে পরিবর্তন আনেন কোচ কাবরেরা। জামাল ভূঁইয়ার বদলে জুনিয়র সোহেল রানা, সামিত সোমের বদলে সিনিয়র সোহেল রানা, ফয়সাল হোসেন ফাহিমের বদলে ফাহমিদুল ইসলাম একসঙ্গে মাঠে নামেন। বাংলাদেশ তখন ২-১ গোলে পিছিয়ে। জামাল, সামিত, ফাহমিদুল, জায়ানরা মিলে হংকংকে চেপে ধরার চেষ্টা করছেন।
এরপর নামেন সাদ উদ্দিনের ছোট ভাই তাজ উদ্দিন। বসুন্ধরা কিংসের আরেক ফুটবলার তাজ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে নামানো হয় জায়ান আহমেদকে। জামাল, সামিত, ফাহমিদুল, জায়ান, হামজা চৌধুরী, মোরসালিনরা সবাই মিলে আক্রমণের তেজ বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশ হারতে যাওয়া ম্যাচটা ড্রয়ের দিকে নিয়ে যায়। খেলোয়াড় পরিবর্তনে কোচ সুফল পেয়েছিলেন। কিন্তু এই পরিবর্তন যদি আরও আগে করা হতো তাহলে ম্যাচের রেজাল্ট অন্যরকমও হতে পারত। সেটা ভেবেই জামালদের কথা হচ্ছে তারা একাদশে খেলতে চান।
জামালরা বুঝতে পারছেন কোচের কৌশলে দুর্বলতা রয়েছে। কোচ হয়তো দল গঠনে পরামর্শ নিতে অধিনায়ক, সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলেন না। জামালের কথায় স্পষ্ট, মঙ্গলবার ফিরতি ম্যাচে হংকং চায়নার বিপক্ষে একাদশে খেলতে চান। প্রবাসী ফুটবলাররা দেশের জন্য ভালোই করছেন, সেটার প্রমাণও মিলেছে হংকংয়ের ম্যাচে। একাদশে থাকলে দলের পাফরম্যান্স আরও ভালো হতে পারে। পরোক্ষভাবে জামাল চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন কোচকে। জামালের কথার পর হংকংয়ের বিপক্ষে হ্যাভিয়ের কাবরেরা একাদশ গঠনে ভাবতে হবে।

সাবেক ফুটবলাররা মনে করছেন, যত যাই করা হোক, দলে যদি একজন স্ট্রাইকার না থাকে তাহলে গোলটা করবে কে। ৩ বছর ধরে একজন কোচ জাতীয় দলের জন্য একটা স্ট্রাইকার তৈরি করতে পারেননি। কোচ জাতীয় দল গঠনের জন্য খেলোয়াড় খোঁজারও প্রয়োজন মনে করেন না। মুখস্ত কিছু নাম আছে। তারাই ঘুরেফিরে দলে থাকেন। বাফুফেও খোঁজ রাখে না, কোচ কী করছে, কীভাবে করছে। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। দিন শেষে দলটা বাংলাদেশের।
ফিরতি ম্যাচ হংকংয়ের মাঠে, জামাল ভূঁইয়ারা ঢাকার মাঠে সুবিধা করতে পারেননি। এখন প্রতিপক্ষের মাঠে কতটা করতে পারবেন সেটা বলা কঠিন। জামাল তো বলেই গেছেন, এখনো সুযোগ আছে। তিন ম্যাচ জিততে হবে। ১ পয়েন্ট হারালে হবে না।’