
এইডস থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার কোনো চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকদের কাছে না থাকলেও, নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এ মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকেরা এইডসের চিকিৎসায় কম্বিনেশন থেরাপি নামে এক নতুন থেরাপি নিয়ে গবেষণা করছেন। এই পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে ৭ জন রোগী বর্তমানে ১৮ মাস ধরে কোনো ওষুধ না খেয়েও সুস্থ আছেন এবং তাঁদের নির্দিষ্ট এইডস থেরাপিও নিতে হচ্ছে না।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, এইডসে আক্রান্ত দশ জনকে নিয়ে এই পরীক্ষা চলছে। তাদের প্রতিষেধক, ইমিউন-অ্যাকটিভ ওষুধ ও ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি (বিএনএবিএস) নির্দিষ্ট ডোজে দেওয়া হয়েছে। তবে কী ধরনের ওষুধ ও অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা হয়েছে, তার নাম এখনও গবেষকেরা জানাননি। তারা বলেছেন, এই কম্বিনেশন থেরাপি-র পরে দেখা গেছে, রোগীদের আর কোনো ওষুধ খেতে হয়নি। যাদের অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল, তাদের আলাদা করে আর কোনো থেরাপি নিতেও হয়নি।
এভাবে ১৮ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে এবং ওষুধ ছাড়াই রোগীরা সুস্থ রয়েছেন। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নতুন চিকিৎসাটি করার পরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) করার আর প্রয়োজন পড়েনি। এটি ছাড়াই এক বছরের ওপর রোগীরা সুস্থ আছেন। নতুন চিকিৎসা যদি সকলের ক্ষেত্রেই কার্যকরী হয়, তা হলে এইডস নির্মূল করার লক্ষ্যে আরও কিছুটা অগ্রসর হওয়া যাবে বলেই আশা রাখা হচ্ছে।
এইডসে আক্রান্ত হলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, আর সেই কারণেই অন্যান্য জীবাণুঘটিত রোগ খুব সহজেই শরীরে বাসা বাঁধে। এর মধ্যে টিউবার কিউলোসিস বা যক্ষ্মা, বিভিন্ন ছত্রাকঘটিত রোগ—যেমন ক্রিপ্টোকক্কাস, ক্যানডিডা— অন্যতম। একই সঙ্গে স্নায়ুঘটিত কিছু রোগ এবং বিশেষ ধরনের কিছু টিউমারও দেখা দিতে থাকে রোগীর শরীরে। এইচআইভি সংক্রমণ মূলত তিনটি ধাপে হয়।
প্রথম ধাপটি হলো—অ্যাকিউট স্টেজ বা অ্যাকিউট রেট্রোভাইরাল সিনড্রোম; যা সংক্রমণের ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হয় এবং নিজে থেকেই ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। এতে সাধারণত, জ্বর বা সর্দি-কাশির মতো সমস্যা দেখা যায়। দ্বিতীয় ধাপ হলো—ক্লিনিক্যাল ল্যাটেন্সি বা ক্রনিক স্টেজ। এই স্টেজে সাধারণত সংক্রমণের কোনো লক্ষণ সেভাবে শরীরে প্রকাশ পায় না।
তৃতীয় এবং শেষ ধাপ হলো এইডস। এই পর্যায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে এবং সেই সময় শরীরে নানা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়, একই সঙ্গে প্রাণঘাতী নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়।