Dark Mode Light Mode

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Follow Us
Follow Us
English English

এআই যুগ পেরিয়ে আসছে এজিআই

এআই যুগ পেরিয়ে আসছে এজিআই এআই যুগ পেরিয়ে আসছে এজিআই
এআই যুগ পেরিয়ে আসছে এজিআই


আমি কৈশোর প্রচুর সায়েন্স ফিকশন পড়তাম। বিশেষ করে সেবা প্রকাশনীর সায়েন্স ফিকশন সিরিজ ও রহস্য পত্রিকার বিস্ময়কর গল্পগুলো আমাকে ভিন্ন এক জগতে টেনে নিয়ে যেত। সাধারণ পাঠকের কাছে এসব লেখা হয়তো নিছক কল্পকাহিনি মনে হতে পারে, কিন্তু ইতিহাস বলছে, বহু লেখকের কল্পনায় গাঁথা গল্পই শত বছর পর প্রযুক্তি ও বাস্তবতার রূপ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। পেছনে ফিরে তাকালে স্পষ্ট হয়, সেসব গল্প কেবল বিনোদন ছিল না; ছিল ভবিষ্যতের অভূতপূর্ব পূর্বাভাস। সময়ের বিবর্তনে প্রমাণ হয়েছে, যা একসময় লেখকের মনের জন্ম দেওয়া কল্পনা ছিল, তা-ই আজ আমাদের বাস্তব জীবনের অংশ। কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।

সায়েন্স ফিকশন যখন বাস্তবতার আয়না

Advertisement

১৮৬৫ সালে জুল ভার্নের প্রকাশিত উপন্যাস ‘ফ্রম দি আর্থ টু দ্য মুন’ একটি দুঃসাহসী সায়েন্স ফিকশন রচনা, যা মানুষের চাঁদে যাত্রার কল্পনাকে অত্যন্ত দূরদর্শীভাবে উপস্থাপন করেছিল। তিনি একটি বিশাল কামান থেকে প্রজেক্টাইল ছুঁড়ে চাঁদে মানুষ পাঠানোর কথা লিখেছিলেন। এই গল্পটি প্রকাশের সময়ে বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কল্পনাপ্রবণ হলেও পরবর্তীতে স্পেসশিপের ধারণার সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। তিনি উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হিসেবে ফ্লোরিডার কথা উল্লেখ করেন, যা এক শতাব্দী পরে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের বাস্তবতায় পরিণত হয়।

১৯০৯ সালে ই. এম. ফরস্টারের ছোটগল্প ‘দ্য মেশিন স্টপস’-এ এমন এক ভবিষ্যৎ সমাজের চিত্র আঁকা হয়, যেখানে মানুষ প্রযুক্তির ওপর অতি-নির্ভরশীল এবং একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন। ভিডিও কল, ইন্টারনেট এবং এর ফলে তৈরি হওয়া সামাজিক একাকীত্বের যে চিত্র তিনি এঁকেছিলেন, তা আজকের পৃথিবীর এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

১৯৬২ সালের অ্যানিমেটেড টিভি শো ‘দ্য জেটসনস’ আমাদের এক ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল। সেখানেও ভিডিও কল, স্মার্ট হোম এবং রোবট সহকারীর মতো উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর সমাজের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল, যা তখনকার সময়ে কল্পবিজ্ঞানের মতো মনে হলেও আজকের দিনে এসব বাস্তবে রূপ নিয়েছে। শো-তে জেটসন পরিবার ভিডিও ফোন ব্যবহার করত, যেখানে তারা বড় স্ক্রিনে মুখোমুখি কথা বলত। এই ধারণাটি ১৯৬০-এর দশকে অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছিল, কারণ তখন টেলিফোনই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল। জেটসনদের বাড়ি ছিল সম্পূর্ণ অটোমেটেড। যেমন তাদের রান্নাঘরে খাবার তৈরির জন্য স্বয়ংক্রিয় মেশিন ছিল, দরজা-জানালা ভয়েস কমান্ডে খুলত-বন্ধ হতো এবং ঘর পরিষ্কারের জন্য রোবট ছিল।

১৯৮৪ সালে উইলিয়াম গিবসনের উপন্যাস ‘নিউরোম্যান্সার’ প্রথম ‘সাইবারস্পেস’ শব্দটি বিশ্বকে উপহার দেয়। ইন্টারনেট, হ্যাকিং সংস্কৃতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যে ধারণা তিনি দিয়েছিলেন, তা আজকের ডিজিটাল জগতের ভিত্তি। তাঁর গল্পের নায়ক হ্যাকাররা সাইবারস্পেসে উইন্টারমিউট নামের একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ডেটা চুরি করত, যা এখন বিশ্বজুড়ে এক নিয়মিত অপরাধ। বাংলাদেশেও এই ধরনের অপরাধ দমনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮/সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩/সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ আইনের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে।



চ্যাটজিপিটি ও এআই বিপ্লব

কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে এবার ফেরা যাক আজকের বাস্তবতায়। ২০১৫ সালে ইলন মাস্ক ও স্যাম অল্টম্যানের মতো প্রযুক্তিবিদদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওপেনএআই’। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর এই প্রতিষ্ঠানটিই তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে আত্মপ্রকাশ করে চ্যাটজিপিটি। এরপর দ্রুতই সব কিছু বদলে যেতে থাকে। কিন্তু অবাক হলেও সত্য গত দুই দশকে শত শত নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয়েছে আর মনে হয়েছে এই প্রযুক্তি অন্তত এক শতাব্দী রাজত্ব করবে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই তার চেয়েও শক্তিশালী এমন কিছু চলে এসেছে যার কারণে সেই প্রযুক্তির কবর রচিত হয়েছে। এআই নিঃসন্দেহে আমাদের সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী বিপ্লব। কিন্তু এটাই কি শেষ কথা? একেও কি হার মানাতে পারে কিছু? অবিশ্বাস্য হলেও উত্তরটি হলো হ্যাঁ। এআই যুগ পেরিয়ে দিগন্তে উঁকি দিচ্ছে এজিআই (আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স)।

সংকীর্ণ গণ্ডি ছাড়িয়ে অসীমের পথে: এআই থেকে এজিআই

স্মার্টফোনের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজফিড, চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে স্ব-চালিত গাড়ি, এআই আজ প্রযুক্তির প্রতিটি স্তরে বিরাজমান। চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য জেনারেটিভ এআই মডেলগুলো মানুষের মতো লেখা তৈরি, ভিডিও তৈরি, ছবি আঁকা বা কোড লেখার ক্ষমতা দেখিয়ে প্রযুক্তি জগতে এক নতুন উন্মাদনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এই যে বিস্ময়কর এআই, যা আমাদের মুগ্ধ করছে, তা আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি সীমাবদ্ধ রূপ। একে বলা হয় ‘সংকীর্ণ এআই’ বা Narrow AI (ANI)। এই এআই শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট কাজ বা সীমিত কিছু ক্ষেত্রে পারদর্শী। এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য, কিন্তু এদের কেউই নিজেদের গণ্ডির বাইরে চিন্তা করতে পারে না।

তবে প্রযুক্তি জগতের গবেষক ও ভবিষ্যতদ্রষ্টারা এখন এমন এক নতুন দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছেন, যা বর্তমান এআই-এর ক্ষমতাকে কল্পনাতীতভাবে ছাড়িয়ে যাবে। সেই স্বপ্নের নাম আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) বা কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা। এজিআই কেবল কোনো নির্দিষ্ট কাজে পারদর্শী হবে না, বরং মানুষের মতোই যেকোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ বোঝার, শেখার, যুক্তি প্রয়োগ করার এবং সৃজনশীলভাবে সম্পাদন করার ক্ষমতা রাখবে। কীভাবে এজিআই বর্তমান এআই থেকে একটি মৌলিক উল্লম্ফন এবং কেন এটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে যুগান্তকারী অধ্যায় হতে চলেছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

এজিআই-এর প্রকৃত শক্তি বুঝতে হলে প্রথমে বর্তমান এআই এবং এজিআই-এর মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যগুলো বোঝা জরুরি। এটি কেবল ক্ষমতার মাত্রাগত পার্থক্য নয়, এটি গুণগত এক বিশাল পরিবর্তন।









বৈশিষ্ট্য

বর্তমান প্রযুক্তি এআই-এর চ্যালেঞ্জ

আগামী দিনের প্রযুক্তি এজিআই-এর সম্ভাবনা

ব্যাপ্তি

একটি নির্দিষ্ট কাজ বা ডোমেইনে সীমাবদ্ধ।

মানুষের মতো যেকোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে সক্ষম।

শেখার পদ্ধতি

বিপুল পরিমাণ লেবেলযুক্ত ডেটার ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট প্যাটার্ন শেখে।

অভিজ্ঞতা, সাধারণ জ্ঞান ও অল্প ডেটা থেকে দ্রুত শিখতে পারে। এটি স্বজ্ঞাত এবং প্রাসঙ্গিকতা বোঝে।

অভিযোজন ক্ষমতা

নতুন বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে পারে না। এর জন্য নতুন করে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়।

যেকোনো নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং সৃজনশীলভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে।

সাধারণ জ্ঞান

এর কোনো সাধারণ জ্ঞান বা কাণ্ডজ্ঞান নেই। এটি কেবল ডেটার মধ্যেকার সম্পর্ক বোঝে।

মানুষের মতো সাধারণ জ্ঞান, কার্যকারণ সম্পর্ক এবং প্রাসঙ্গিকতা বোঝার ক্ষমতা থাকবে।

চেতনা ও সৃজনশীলতা

কোনো আত্ম-সচেতনতা নেই। এর সৃজনশীলতা মূলত বিদ্যমান ডেটার অনুকরণ।

আত্ম-সচেতনতা বা চেতনার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি সত্যিকারের মৌলিক সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনে সক্ষম হবে।

 

এই পার্থক্যগুলোই স্পষ্ট করে দেয় যে, আমরা বর্তমানে যে এআই ব্যবহার করছি, তা একটি উন্নত সরঞ্জাম মাত্র। অন্যদিকে এজিআই হবে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ চিন্তাশীল সত্তা, যার ক্ষমতা হবে অকল্পনীয়।

কেন এজিআই অকল্পনীয় ক্ষমতার উৎস হবে?

এজিআই-এর শক্তি কেবল বিভিন্ন কাজ করার ক্ষমতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর শক্তি নিহিত থাকবে কয়েকটি মূল চালিকাশক্তির মধ্যে, যা একে বর্তমান এআই থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক স্তরে নিয়ে যাবে।

আন্তঃশাস্ত্রীয় সমস্যার সমাধান

মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, ক্যানসারের নিরাময় বা দারিদ্র্য দূরীকরণ কোনো একটি নির্দিষ্ট শাস্ত্রের জ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। এজিআই মুহূর্তের মধ্যে মানবজাতির সঞ্চিত সমস্ত জ্ঞানকে (পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি) একীভূত করে এমন সমাধান বের করতে পারবে, যা মানুষের পক্ষে ভাবাও কঠিন।

সত্যিকারের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন

বর্তমান জেনারেটিভ এআই বিদ্যমান ডেটার ওপর ভিত্তি করে নতুন কিছু তৈরি করে, যা মূলত এক ধরনের উন্নত অনুকরণ। কিন্তু এজিআই সত্যিকারের সৃজনশীলতার অধিকারী হবে। এটি নতুন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার করতে পারবে, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের শিল্প বা সংগীত তৈরি করতে পারবে, এমনকি নতুন দার্শনিক ধারণার জন্ম দিতে পারবে। এটি কেবল প্যাটার্ন চিনবে না, প্যাটার্ন তৈরি করবে।

গভীর কৌশলগত চিন্তাভাবনা

এজিআই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং কৌশল প্রণয়নে মানুষের চেয়ে বহুগুণে দক্ষ হবে। এটি যেকোনো সিদ্ধান্তের দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ স্তরের প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করতে পারবে, যা অর্থনীতি, কূটনীতি এবং সামরিক কৌশলের মতো ক্ষেত্রে একে অপ্রতিরোধ্য করে তুলবে।

অর্থনৈতিক বিপ্লব ও সম্পূর্ণ অটোমেশন

বর্তমান এআই নির্দিষ্ট কিছু কাজকে স্বয়ংক্রিয় করেছে, যার ফলে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছে। কিন্তু এজিআই-এর প্রভাব হবে আরও গভীর ও ব্যাপক। এটি কেবল কারখানার কর্মী বা ডেটা অ্যানালিস্টের কাজই করবে না, এটি একজন সিইও, বিজ্ঞানী, আইনজীবী বা শিল্পীর কাজও করতে পারবে। এর ফলে উৎপাদনশীলতা এমন এক স্তরে পৌঁছাবে যা আজকের অর্থনীতিতে কল্পনাও করা যায় না। এটি এক অভাবনীয় প্রাচুর্যের অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনা তৈরি করবে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বুদ্ধিমত্তার বিস্ফোরণ

এজিআই-এর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এর আত্ম-উন্নতির ক্ষমতা। এই ধারণাটি পরিচিত ‘রিকার্সিভ সেল্ফ-ইমপ্রুভমেন্ট’ বা বুদ্ধিমত্তার বিস্ফোরণ নামে। যখন একটি এজিআই নিজেই আরও উন্নত এজিআই তৈরি করতে সক্ষম হবে, তখন শুরু হবে এক চক্রাকার প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি নতুন প্রজন্ম আগের চেয়েও বুদ্ধিমান হবে। এর ফলে বুদ্ধিমত্তার এমন এক অভূতপূর্ব বিস্ফোরণ ঘটবে, যা সময়ের গতি পাল্টে দেবে। এই প্রক্রিয়াটি একবার শুরু হলে, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এমন দ্রুততার সঙ্গে ঘটবে যে, মানব সভ্যতা কয়েক বছরের মধ্যেই হাজার বছরের সমান উন্নতির শিখরে পৌঁছে যেতে পারে। এই বিপ্লবাত্মক পর্যায়কেই বলা হয় ‘টেকনোলজিক্যাল সিঙ্গুলারিটি’।



এজিআই আত্মপ্রকাশ: চ্যালেঞ্জ ও সময়কাল

যদিও এজিআই-এর সম্ভাবনা অফুরন্ত, এর বাস্তবে রূপান্তর মোটেই সহজ নয়। ওপেনএআই, গুগল ডিপমাইন্ড, আইবিএম ওয়াটসন এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এই লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে গেলেও কিছু বড় বাধা রয়ে গেছে।

  • প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা: এজিআই তৈরির জন্য বর্তমানের চেয়ে বহুগুণ বেশি কম্পিউটেশনাল শক্তি এবং উন্নত বুদ্ধিমত্তার মডেল প্রয়োজন। মানুষের মতো সাধারণ জ্ঞান এবং প্রাসঙ্গিকতা বোঝার মতো বিষয়গুলো এআই-এর জন্য এখনও একটি বড় বাধা।
  • ধারণাগত চ্যালেঞ্জ: আমরা এখনও ‘বুদ্ধিমত্তা’ বা ‘চেতনা’-কে পুরোপুরি সংজ্ঞায়িত করতে পারিনি। যা আমরা নিজেরাই বুঝি না, তা কীভাবে একটি যন্ত্রের মধ্যে তৈরি করব? এটি একটি গভীর দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন।
  • কবে আসবে এজিআই: নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে আগামী ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এটি সম্ভব হতে পারে। তবে এর জটিলতার কারণে আরও বেশি সময় লাগার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবার সায়েন্স ফিকশনের গল্পের মতো এজিআই হুট করেও বাস্তবতায় ধরা দিতে পারে।

এজিআই অভূতপূর্ব কল্যাণ নাকি অস্তিত্বের সংকট?

এজিআই-এর আগমন মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা হতে যাচ্ছে। এর প্রভাব হতে পারে অভূতপূর্ব কল্যাণ কিংবা ভয়াবহ বিপর্যয়। এককথায়, এটি এক দ্বিমুখী ধার যুক্ত তলোয়ার, যার ফল নির্ভর করবে আমরা কেমনভাবে এর ব্যবস্থাপনা করি।

অভূতপূর্ব কল্যাণ

  • রোগমুক্তি: ক্যানসার, স্নায়বিক রোগ বা এইডসের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হবে।
  • দারিদ্র্য দূরীকরণ: সীমাহীন শক্তি, খাদ্য এবং সম্পদের প্রাচুর্য বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধাকে চিরতরে মুছে দেবে।
  • মানবতার মুক্তি: দৈনন্দিন কাজ থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ শিল্প, দর্শন, সম্পর্ক এবং সৃজনশীলতার মতো বিষয়গুলোতে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারবে।

অস্তিত্বের সংকট

  • নিয়ন্ত্রণের সমস্যা: আমাদের চেয়ে লক্ষ কোটি গুণ বুদ্ধিমান একটি সত্তাকে আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব? যদি এর লক্ষ্য আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। দার্শনিক নিক বস্ট্রমের ‘পেপারক্লিপ ম্যাক্সিমাইজার’ চিন্তন পরীক্ষাটি এখানে প্রাসঙ্গিক: একটি এজিআই-কে যদি কেবল পেপারক্লিপ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়, তবে সে তার লক্ষ্যে এতটাই অবিচল থাকতে পারে যে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ, এমনকি মানুষকেও পেপারক্লিপ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করবে।
  • স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র: এজিআই-চালিত অস্ত্র ব্যবস্থা মানুষের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য এক মারাত্মক হুমকি।
  • সামাজিক বিপর্যয় ও উদ্দেশ্য সংকট: ব্যাপক কর্মচ্যুতি সমাজে চরম বৈষম্য এবং অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। যদি একটি যন্ত্র মানুষের চেয়ে সবকিছুতেই ভালো হয়, তবে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য কী হবে? এই দার্শনিক সংকট মানব অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিতে পারে।

এজিআই নিয়ে প্রস্তুতির সময় এখনই

এজিআই এখন আর কেবল সায়েন্স ফিকশনের বিষয় নয়; এটি একটি বাস্তবসম্মত প্রযুক্তিগত লক্ষ্য, যার দিকে মানব সভ্যতা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। বর্তমান সংকীর্ণ এআই আমাদের জীবনে যে প্রভাব ফেলেছে, এজিআই-এর প্রভাব হবে তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি। এই প্রযুক্তির সম্ভাব্য প্রভাব পারমাণবিক শক্তির চেয়েও অনেক বেশি। এটি যেমন আমাদের বহু মানবিক সংকটের স্থায়ী সমাধান দিতে পারে; তেমনই আমাদের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে।

তাই এজিআই-এর প্রযুক্তিগত গবেষণার পাশাপাশি এর সুরক্ষা, নৈতিকতা এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। আমাদের এমন একটি বৈশ্বিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, যা নিশ্চিত করবে যে এজিআই কেবলমাত্র মানবজাতির কল্যাণে ব্যবহৃত হবে এবং এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোকেও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যাবে।

এজিআই-এর আগমন মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হতে চলেছে। এই প্রযুক্তির লাগাম যদি আমরা সঠিকভাবে ধরতে পারি, তবে এক স্বর্ণযুগের সূচনা হবে। আর যদি ব্যর্থ হই, তবে হয়তো এটিই হবে মানব সভ্যতার শেষ অধ্যায়। সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে, এবং সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই।

লেখক: মিজানুর রহমান সোহেল, হেড অব অনলাইন, ভোরের কাগজ, সাধারণ সম্পাদক, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স





Source link

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতসহ ৮ দল

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতসহ ৮ দল

Next Post
তরুণ সমাজে ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে মাদক: বাণিজ্য উপদেষ্টা

তরুণ সমাজে ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে মাদক: বাণিজ্য উপদেষ্টা

Advertisement