
ফিলিস্তিনের গাজায় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টার কারণে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন ইসরায়েলের চরমপন্থি মন্ত্রীদের শাস্তি এবং তেল আবিবের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’-এর ভাষণে তিনি এই ঘোষণা দেন।
এই ভাষণে ভন ডার লিয়েন কঠোর ভাষায় গাজায় ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ এবং ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে দুর্বল করার’ ইসরায়েলি প্রচেষ্টার নিন্দা করেন। তিনি আরও বলেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ইউরোপীয় নেতাদের দুর্বল প্রতিক্রিয়া এবং ইউরোপের সম্মিলিত অক্ষমতা ‘বেদনাদায়ক’। তিনি বলেন, ‘গাজায় যা ঘটছে তা অগ্রহণযোগ্য। ইউরোপকে অবশ্যই পথ দেখাতে হবে যেভাবে অতীতে দেখিয়েছে।’ তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন যে, ইইউ ইসরায়েলের ‘চরমপন্থি মন্ত্রী’ এবং ফিলিস্তিনে সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এবং ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করবে।
ইউরোপীয় কমিশনের এই নতুন পদক্ষেপের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস। তিনি বলেন, মাদ্রিদ এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে এবং এটি স্পেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতির প্রতিফলন। এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেন, ‘ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি স্থগিত করার প্রস্তাব একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি।’
তিনি বলেন, ‘গাজার পরিস্থিতি একেবারেই বিপর্যয়কর, এর কোনো নৈতিক যৌক্তিকতা নেই। নিরীহ বেসামরিক নাগরিক, নারী ও শিশুদের হত্যা, একটি জনগোষ্ঠীকে অনাহারে রাখা—এসব আন্তর্জাতিক আইনের সব রীতিনীতি লঙ্ঘন করে।’ মার্টিন আরও বলেন, ‘গাজার এই মহাবিপর্যয়ের মুখে ইউরোপ নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকতে পারে না’, এই বক্তব্যের জন্য তিনি ইউরোপীয় কমিশনকে স্বাগত জানান।
এদিকে, ভন ডার লিয়েনের এই ঘোষণার পর ইসরায়েলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা’ আক্রমণাত্মক ভাষায় বলেন, ‘আজ সকালে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টের যে মন্তব্য, তা দুঃখজনক। এর মধ্যে হামাস ও তার সহযোগীদের মিথ্যা প্রচারণার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস সামরিক অভিযান চালিয়ে ইসরায়েল ৬৪ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এই সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকা বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ইসরায়েলের অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে না পারায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র: ইউরো নিউজ ও পলিটিকো