
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত একদিনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েল গাজা সিটিতে অবস্থানরত লাখো মানুষকে শহর ছাড়তে ‘শেষবারের মতো হুঁশিয়ারি’ দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ এক্সে (পূর্বে টুইটার) লিখেছেন, গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া সবাইকে ‘সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসীদের সমর্থক’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং না ছাড়লে সামরিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে অন্তত ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় গাজা সিটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ডজনের পর ডজন মানুষ নিহত হচ্ছে, ভেঙে পড়ছে আবাসিক ভবন ও স্কুল। হাজারো মানুষ বাধ্য হয়ে দক্ষিণের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে, তবে পালানোর পথেও তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আল-রাশিদ সড়ক দিয়ে ইসরায়েলি সেনারা মানুষকে শহর ছাড়তে বাধ্য করছে, আবার উপকূল ধরে দক্ষিণমুখী হওয়ার পথেও হেলিকপ্টার, ড্রোন ও ট্যাংক দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে চরম আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মানুষ গাজা সিটি ছাড়ছে না মূলত ভয় এবং ইসরায়েলি সেনাদের ভয়ঙ্কর তৎপরতার কারণে।
চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গাজা সিটিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন এবং দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে আরও ১৩ জন নিহত হয়েছেন। চলমান দুর্ভিক্ষে খাদ্য সংগ্রহে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা এখন প্রায় ২ হাজার ৬০০ এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৯ হাজার।
আল জাজিরাকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় মোট প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ২২৫ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৮ জন। এছাড়া, এই বছরের মার্চে ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার পর থেকে নিহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৫৭ জন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি ইসরায়েলের এই চরম হুঁশিয়ারির প্রতিক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া মানুষকে সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসীদের সমর্থক হিসেবে আখ্যা দেওয়া মানে হলো ‘পরিকল্পিত গণহত্যার ইঙ্গিত’। এতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং শারীরিকভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম ব্যক্তিরা গণহারে হত্যার শিকার হতে পারেন।