
ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি আমির সাঈদ ইয়াভানি।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ‘পারমাণবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে ইয়াভানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ‘জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী’ ইচ্ছাকৃতভাবে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তিনি জানান, এসব স্থাপনা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)-এর অনুচ্ছেদ ৪ অনুসারে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও বহুপাক্ষিকতার ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত।
তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক পরীক্ষার মতোই এসব স্থাপনার ওপর হামলাও মানবস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তার জন্য সমানভাবে বিপজ্জনক।’ সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বেপরোয়া হামলা এই উদ্বেগকে আরও স্পষ্ট করেছে।
ইয়াভানি আরও জানান, ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের শহরে অবস্থিত আইএমএস (ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং সিস্টেম) স্টেশনগুলোতেও হামলা চালিয়েছে, যা সমানভাবে উদ্বেগজনক। এ ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড এসব স্থাপনার নিরাপত্তা ও অখণ্ডতাকে বিপন্ন করছে এবং প্রযুক্তিগত কর্মীদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। একই সঙ্গে সিটিবিটিও (কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি অর্গানাইজেশন)-এর বিস্তৃত উদ্দেশ্যকেও দুর্বল করে তুলছে।
ইয়াভানি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, এই কর্মকাণ্ডগুলোর জোরালো নিন্দা জানাতে হবে এবং যারা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর অক্ষত থাকার নিশ্চয়তাকে একটি অপরিবর্তনীয় নিয়মে পরিণত করতে হবে, যাতে অপরাধীরা বুঝতে পারে যে এই ধরনের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য তারা কোনোভাবেই দায়মুক্তি পাবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘পারমাণবিক পরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান বিস্ফোরণের ভয়াবহ ঝুঁকিকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু একই ধরনের পরিণতি সৃষ্টিকারী হামলার ক্ষেত্রে যদি নীরবতা বজায় রাখা হয়, তবে তা দ্বৈত মানদণ্ড ও ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়।’
ইয়াভানি জানান, এসব হামলা এনপিটি চুক্তির মূল ভিত্তিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই চুক্তির শর্ত হলো—যেসব রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র নেই, তারা দুটি নিশ্চয়তার বিনিময়ে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করবে না: শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি বিকাশের অধিকার এবং পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু যদি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো হুমকি ও আক্রমণের বাইরে নিরাপদ না থাকে, তবে এই গ্যারান্টির কোনো অর্থই থাকে না।
তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, সব স্থাপনাকে হামলা থেকে সুরক্ষা দেওয়া এবং পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা—এসবই পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইয়াভানি সতর্ক করে বলেন, ‘নতুন হুমকির মুখে নীরব থাকা অতীতের শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হবে। আমাদের অবশ্যই পারমাণবিক বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং এমন একটি পৃথিবীর জন্য কাজ করতে হবে যেখানে পারমাণবিক শক্তি ধ্বংসের নয়, বরং মানবজাতির অগ্রগতি ও মর্যাদার জন্য ব্যবহৃত হবে।’
সূত্র: মেহের নিউজ