
জাতিসংঘ ফের ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ১০ বছর আগে ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তির আওতায় এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চুক্তিতে থাকা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু করে নিষেধাজ্ঞা ফের কার্যকর করেছে। তাদের অভিযোগ, ইরান সহযোগিতা করছে না এবং পারমাণবিক কর্মসূচি আরও বাড়াচ্ছে।
২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে তার পারমাণবিক স্থাপনা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের জন্য খুলে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।
কিন্তু গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালালে ইরান এই পরিদর্শন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তার দেশের পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে তিনি নতুন নিষেধাজ্ঞাকে ‘অন্যায্য, বেআইনি ও অন্যায়’ আখ্যা দেন।
২০১৫ সালের চুক্তির আওতায়, ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুদ, পারমাণবিক স্থাপনা গড়া এবং গবেষণা কার্যক্রম সবকিছুর সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
মূল লক্ষ্য ছিল ইরানকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়া, কিন্তু অস্ত্র বানাতে না দেওয়া।
কিন্তু ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালের ওই চুক্তি থেকে সরে যান। এরপর থেকেই ইরান নিষিদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচি আবার জোরদার করে।
ট্রাম্প বরাবরই ২০১৫ সালের চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং নতুন শর্তে ভাল চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল চলতি বছরের জুনে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে ইরানের বড় ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ইউরোপীয় যে দেশগুলো ২০১৫ সালের চুক্তিতে ছিল, তারা এখনও আশা করছে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো যাবে।
তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইরান যেন কোনও উসকানিমূলক পদক্ষেপ না নেয় সে আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। জাতিসংঘ পুনরায় বহাল হওয়ার মানেই কূটনীতি শেষ হয়ে যাওয়া নয়।’
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ইউরোপের তিন দেশ এ সপ্তাহের শুরুর দিকে ইরানের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনও সমাধান আসেনি।
ফলে দেশগুলো বলছে, ইরান বারবার অঙ্গীকার ভঙ্গ করায় নিষেধাজ্ঞা ফেরানো ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় ছিল না।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কাল্লাস গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আগে প্রত্যাহার করা জাতিসংঘ ও ইইউর পারমাণবিক সম্পর্কিত সব নিষেধাজ্ঞা অনতিবিলম্বে আবার কার্যকর করবে।’
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালকে ‘অন্যায্য’ উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে।
এ পদক্ষেপের ফলে ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘তুলে নেওয়া প্রস্তাবগুলো আবার কার্যকর করা আইনগতভাবে ভিত্তিহীন এবং অন্যায্য সব রাষ্ট্রকে এই অবৈধ পরিস্থিতি স্বীকার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।’