
পাকিস্তানে আজ রোববার (৯ নভেম্বর) ‘প্রাচ্যের কবি’ আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এই উপলক্ষে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ পৃথক বার্তায় ইকবালের চিন্তাধারা থেকে প্রেরণা নিয়ে সমৃদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি জারদারি জাতিকে আল্লামা ইকবালের আদর্শ ও নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি নবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা তার অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। চলুন তার জীবন ও আদর্শ থেকে শক্তি গ্রহণ করি এবং একসঙ্গে কাজ করে সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান গড়ে তুলি।’
তিনি বলেন, ইকবালের দৃষ্টিভঙ্গি উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার চেতনা জাগিয়ে তোলে। ১৯৩০ সালে অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ অধিবেশনে তার ভাষণ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করে। রাষ্ট্রপতি জারদারি আরও বলেন, ‘ইকবালের সাহিত্যকর্ম যেমন আসরার-এ-খুদী, রুমুজ-এ-বেখুদী ও বাং-এ-দারা কেবল সাহিত্য নয়, এগুলো পরিচয়, আধ্যাত্মিকতা ও স্বাধীনতার প্রশ্নের বিশ্লেষণ দেয়। তার চিন্তাভাবনা আজও পাকিস্তানের জাতীয় পরিচয় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’ তিনি প্রার্থনা করেন, ইকবালের দৃষ্টিভঙ্গি দেশের অগ্রগতির পথপ্রদর্শক হিসেবে থাকবে এবং প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, ইকবালের চিন্তাধারার আলোকে সরকার এমন শিক্ষা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর যা কেবল জীবিকা দেবে না, বরং বুদ্ধি ও চরিত্র গঠনে সহায়তা করবে। তিনি ইকবালকে বর্ণনা করেছেন, ‘একজন আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি, যিনি দাসত্বের অন্ধকারে আলো জ্বালিয়েছেন এবং হতাশ একটি জাতিকে আত্মনির্ভরতার বার্তা দিয়েছেন।’
শেহবাজ শরীফ বলেন, ‘ইকবাল শিখিয়েছেন যে বিশ্বাস, জ্ঞান এবং কর্মই সেই স্তম্ভ, যার ওপর একটি জীবন্ত জাতি নিজেদের গড়ে তোলে। তার দর্শনা আজও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার যুবসমাজের জন্য আধুনিক শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করতে ‘উরান পাকিস্তান’সহ বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করেছে। যুবকরা, ইকবালের মতে, দেশের স্থপতি এবং ‘ভবিষ্যতের বাজ’।
ইকবালের ঐক্যের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে শরীফ বলেন, ‘আজকের বিশ্বে ইকবালের বার্তা প্রয়োজন, যাতে সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে ভ্রাতৃত্ব, ঘৃণার পরিবর্তে ভালোবাসা এবং শক্তির পরিবর্তে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়।’
তিনি বলেন, ইকবালের চিন্তাভাবনা পাকিস্তানের নীতি ও সামাজিক জীবনের দিকনির্দেশক হবে, যাতে দেশ হয় ‘ইকবালের স্বপ্নের পাকিস্তান—যেখানে জ্ঞান, কর্ম, ভালোবাসা, সহনশীলতা, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’
এদিকে, ইকবাল মাজারে আনুষ্ঠানিক পালা-রক্ষক পরিবর্তন অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পাকিস্তান নেভির সেন্ট্রাল পাঞ্জাব কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহেল আহমাদ আজমি। তিনি অনুষ্ঠানে পাকিস্তান রেঞ্জার্স পাঞ্জাব এবং পাকিস্তান নেভির কন্টিনজেন্ট পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনের পরে পাকিস্তান নেভির প্রশিক্ষিত কন্টিনজেন্ট মাজারের আনুষ্ঠানিক রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে, আর পাকিস্তান রেঞ্জার্স পাঞ্জাব কন্টিনজেন্ট তাদের দায়িত্ব শেষ করে। রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহেল আহমাদ আজমি মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং আল্লামা ইকবালের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ ফাতেহা পাঠ করেন।