
বিশ্বের গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ জেনোসাইড স্কলারস (IAGS) ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। এতে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েল যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তা সকল আইনি মানদণ্ড পূরণ করেছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ৫০০ সদস্যের আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের ৮৬ শতাংশ সদস্যই এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দেন।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের সংগঠনটি ঐতিহাসিক বা চলমান বিষয়ে গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে ৯টি প্রস্তাব পাস করেছে। এর মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাও অন্তর্ভুক্ত হলো।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি সরকার মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত ও ব্যাপক অপরাধে জড়িত। যার মধ্যে বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে নির্বিচার এবং ইচ্ছাকৃত আক্রমণ অন্তর্ভুক্ত।’
জাতিসংঘে গৃহীত গণহত্যা সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে, সম্প্রদায়ের সদস্যদের হত্যা করা, তাদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা, তাদের ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিত পরিস্থিতি তৈরি করা, জন্ম রোধ করা।
বিশেষজ্ঞদের গৃহীত তিন পৃষ্ঠার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত আক্রমণ এবং হত্যা; অনাহার; মানবিক সাহায্য, পানি, জ্বালানি এবং জনসংখ্যার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র থেকে বঞ্চিত করা; যৌন ও প্রজনন সহিংসতা এবং জনসংখ্যার জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি ঘটেছে।
তারা ইসরায়েলকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সকল কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক মেলানি ও’ব্রায়েন রয়টার্সকে বলেছেন, ‘গণহত্যা গবেষণার ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এটি একটি নিশ্চিত বিবৃতি যে, গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা।’
এই সংগঠনের সদস্য নন এমন একজন নেদারল্যান্ডসের ওপেন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক সের্গেই ভাসিলিয়েভ বলেন, এই প্রস্তাবটি দেখায়- আইনি মূল্যায়নটি একাডেমিক জগতের মধ্যে, বিশেষ করে গণহত্যা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে।
বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠী এবং কিছু ইসরায়েলি সংস্থাও ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অফিসের শত শত কর্মী ভলকার তুর্ককে চিঠি লিখে গাজা যুদ্ধকে একটি চলমান গণহত্যা হিসেবে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গাজাজুড়ে ইসরায়েলি গণহত্যা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে দেড় লাখের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। ইসরায়েলি বাহিনী নিজেদের পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন দুর্ভিক্ষের শিকার অনেক ফিলিস্তিনি অনাহারে প্রাণ হারাচ্ছেন।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস
গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের এই প্রস্তাবটিকে প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামাস পরিচালিত গাজা সরকারি মিডিয়া অফিসের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বলেছেন, এটি বিশেষজ্ঞদের অবস্থান আন্তর্জাতিক আদালতের সামনে উপস্থাপিত নথিভুক্ত প্রমাণ এবং তথ্যগুলোকে আরও শক্তিশালী করে।
তিনি বলেন, এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর অপরাধ বন্ধ করতে, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে এবং দখলদার নেতাদের জবাবদিহি করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য একটি আইনি ও নৈতিক বাধ্যবাধকতা আরোপ করে।