
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সময় ও সুযোগ দুটোই সীমিত-১২০ বলের এই ফরম্যাটে প্রতিটি ডেলিভারিই হতে পারে ম্যাচ নির্ধারণী। অথচ বাংলাদেশ দলের ব্যাটাররা যেন বারবার ভুলে যান এই বাস্তবতা। অতিরিক্ত ডট বল, ছন্দহীন ব্যাটিং আর অগোছালো পরিকল্পনার কারণে জয়ের বদলে পরাজয়ই এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ১৪৯ রানে থামিয়ে দিয়েও ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৪ রানের হার-বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সংকটের যেন নগ্ন প্রতিচ্ছবি।
আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। লক্ষ্য একটাই- হোয়াইটওয়াশ এড়ানো। কিন্তু সেই লড়াইয়ে নামার আগে একবার পেছনে তাকালে বোঝা যায়, বাংলাদেশের সমস্যাটা কেবল ব্যাটিং ব্যর্থতা নয়, এটি এক ধরণের মানসিক ও কৌশলগত জটিলতা, যা দলের ভেতরে গভীরভাবে গেঁথে বসেছে।
গেল ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংসে ডট বলের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০-অর্থাৎ ইনিংসের প্রায় অর্ধেক বলেই কোনো রান হয়নি। আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে এমন ব্যাটিং মানে আত্মসমর্পণ। ইংল্যান্ড, ভারত বা এমনকি আফগানিস্তানের ব্যাটাররা এখন ডট বল কমিয়ে প্রতি ওভারে স্কোরবোর্ড সচল রাখায় মনোযোগী, সেখানে বাংলাদেশ এখনো আগের যুগে আটকে আছে। ঝুঁকি নেওয়ার সাহস নেই, গতি বাড়ানোর চেষ্টা নেই- চাপে পড়ে হুট করে উইকেট বিলিয়ে দেওয়া এখন প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে।
তানজিদ হাসান তামিম, যিনি দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি করেও দলের হার ঠেকাতে পারেননি। তিনি বাস্তবতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘এই জায়গাটা যদি আমরা একটু ডট বলগুলো কমাতে পারতাম, তাহলে চাপটা কম হতো।’ নিজের ব্যর্থতার দায়ও কাঁধে নিয়েছেন, ‘আমার মনে হয় আমি যদি শেষ পর্যন্ত থাকতে পারতাম, ম্যাচটা বের হয়ে যেতো।’ তামিমের এই উপলব্ধি যতই প্রশংসনীয় হোক, দলের সামগ্রিক ব্যাটিং মানসিকতা বদলানো ছাড়া কোনো অগ্রগতি সম্ভব নয়।
অধিনায়ক লিটন দাসও হতাশ। তিনি বলছেন, ‘চট্টগ্রামের মতো উইকেটে ১৫০ রান বড় কিছু নয়। আমরা যখনই ভালো শুরু পেয়েছি, তখনই আউট হয়ে গেছি।’ তার এই কথার পেছনে লুকিয়ে আছে বাস্তব সমস্যা- বাংলাদেশ ব্যাটাররা ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোয় ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। দায়িত্ববোধের ঘাটতি এবং ম্যাচ সচেতনতার অভাব বাংলাদেশের ব্যাটিং সংস্কৃতির এক পুরোনো ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাবেক পেসার রুবেল হোসেন বাংলাদেশের করুণ ব্যাটিংয়ের কঠিন সমালোচনা করেছেন। আফসোস করে সামাজিকমাধ্যমে লিখেছেন, ‘মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর অভাবটা খুব টের পেয়েছি। চট্টগ্রামের মতো ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে সুযোগটা নিতে পারিনি। প্রশ্ন থেকে যায়, ভুলটা আসলে কোথায় হচ্ছে?’
অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। দ্বিতীয় ম্যাচে কিছু ক্যাচ মিস করলেও তাদের বোলাররা নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন। ব্যাটার অ্যালিক আথানজে সোজাসাপ্টা বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হোয়াইটওয়াশ। তবে কাউকে হালকাভাবে নিচ্ছি না।’ বাংলাদেশ যেখানে নিজেদের ছন্দ খুঁজতে ব্যস্ত, সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চাইছে সিরিজটা ৩-০ করে চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে।
আজকের ম্যাচ তাই বাংলাদেশের জন্য কেবল পরাজয় ঠেকানোর নয়, আত্মসম্মান রক্ষারও লড়াই। এই ম্যাচই হতে পারে নিজেদের ব্যাটিং দর্শন পালটানোর সূচনা। ডট বল কমানো, মাঝের ওভারে স্ট্রাইক রোটেশন, আর ইনিংসের শেষভাগে দায়িত্বশীল ব্যাটিং- এই তিন জায়গায় পরিবর্তন না আনলে আবারও একই গল্পের পুনরাবৃত্তি হবে। চট্টগ্রামের আলো জ্বলে উঠবে সন্ধ্যা ৬টায়। দর্শকরা চাইবেন একটাই জিনিস- লড়াকু বাংলাদেশ, যারা অন্তত শেষ ম্যাচটা জিতে দেখাবে যে তারা এখনো হার মানেনি। কিন্তু মাঠে নামার আগে প্রশ্নটা থেকে যায়- ডট বলের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার মানসিকতা কি তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে?
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	