
একটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের জন্য ভক্তরা অপেক্ষা করে মাসের পর মাস। মূলত বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপে দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ আসে। এবারের এশিয়া কাপে সেটি ঘটছে দ্বিতীয়বারের মতো। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তান হেরে মাঠ ছেড়েছিল, আর ভারতীয় ক্রিকেটাররা তখন হাত না মিলিয়েই সাজঘরে ফিরেছিলেন। এরপর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে মাঠের বাইরেও। আজ দু’দল আবার মুখোমুখি হবে সুপার ফোরে, রাত সাড়ে ৮টায়, যেখানে পাকিস্তান মুখিয়ে আছে প্রতিশোধের লড়াইয়ে নামতে।
তবে এই ম্যাচকে ঘিরে মাঠের বাইরের পরিস্থিতিও বেশ তীব্র। সম্প্রতি ‘হ্যান্ডশেক’ বিতর্ক, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে ঘিরে দ্বন্দ্ব, কিংবা পাকিস্তানের ধারাবাহিকভাবে প্রেস কনফারেন্স বাতিল-সব মিলিয়ে আগের চেয়ে বেশি উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান আজকের ম্যাচের আগেও নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করেছে। যদিও অনুশীলন সেশন তারা চালিয়ে গেছেন, তবে বারবার গণমাধ্যম এড়িয়ে যাওয়া পাকিস্তান দলের ভেতরের টানাপড়েনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এদিকে পাকিস্তানের দলে সাইম আইয়ুবকে ঘিরে চলছে অন্যরকম আলোচনা। ২০২৩ সালে অভিষেকের পর থেকেই তাকে নিয়ে প্রত্যাশার পাহাড় গড়ে উঠেছে। কখনো ঝলক দেখিয়েছেন, আবার অনেক ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন। ওপেনার হিসেবে তার ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট, তবে এবারের এশিয়া কাপে তিনি বল হাতে বিস্ময়কর অবদান রাখছেন। পাওয়ার প্লেতে তার বোলিং পরিসংখ্যান অসাধারণ- গড় ৫.৬০, ইকোনমি রেটও মাত্র ৫.৬০। ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে তিন উইকেট তুলে নিয়ে তিনিই ছিলেন পাকিস্তানের সেরা অস্ত্র। ব্যাট হাতে দলে অবদান কম হলেও বল হাতে তিনি পাকিস্তানের কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।
ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আইয়ুবের মধ্যে অনেকটা শাহিদ আফ্রিদির ছায়া দেখা যায়। হঠাৎ ঝলকে ম্যাচ জেতানো, আবার একই সঙ্গে পরপর ব্যর্থতা- এই দোদুল্যমানতাই পাকিস্তান ক্রিকেটের চিরচেনা চিত্র। তবে নির্বাচকেরা এখনো তার প্রতি আস্থা রাখছেন, কারণ পাকিস্তান ক্রিকেট বরাবরই ‘আশার আলো’ ধরে রাখতে ভালোবাসে। বিশেষ দিনে, বড় ম্যাচে, হয়তো সেই প্রতিভা সঠিকভাবে জ্বলে উঠবে-এই বিশ্বাসই তাকে দলে রেখেছে। অন্যদিকে ভারতীয় শিবির তুলনামূলকভাবে শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী। অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব সংবাদ সম্মেলনে বেশ হাস্যরসের মধ্যেই প্রশ্ন সামলেছেন।
বাইরের চাপ থেকে খেলোয়াড়দের দূরে রাখার কৌশল হিসেবে সূর্যকুমার বলেছেন, ‘ঘরের দরজা বন্ধ করো, ফোন বন্ধ করো, ঘুমাও।’ প্রতিপক্ষের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপড়েন মাঠেও প্রভাব ফেলছে, তবে ভারতীয় দল সেটা পাশ কাটিয়ে ক্রিকেটেই মনোযোগ ধরে রাখতে চাইছে। সূর্যকুমারের মন্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে, ভারত ম্যাচটিকে শুধু আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে, বাড়তি চাপ হিসেবে নয়।
তবে ম্যাচ রেফারি পাইক্রফটকে নিয়েও বিতর্ক এখনো থামেনি। আগের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে টসের সময় হ্যান্ডশেক না করানোর ঘটনায় পাকিস্তান তাকে সরানোর দাবি তুলেছিল। পরে আইসিসি বৈঠকের পর আপাতত সেই অধ্যায় থেমে গেলেও নতুন করে আবার তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আজকের ম্যাচে। ফলে ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই অদৃশ্য চাপ ও নজর থাকবে তার দিকেও।
সব মিলিয়ে আজকের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শুধু মাঠের ভেতরের লড়াই নয়, বরং মাঠের বাইরের কূটনীতি, বিতর্ক, প্রতিশোধের আবেগ আর ভক্তদের তীব্র প্রত্যাশার সমাহার। পাকিস্তান প্রতিশোধের জ্বালায় উজ্জীবিত, আর ভারত চায় নিজেদের ছন্দ ধরে রাখতে। দুদলই জানে, এই ম্যাচ শুধু পয়েন্ট টেবিলে নয়, মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়েও রেখে যাবে বড় প্রভাব।