
মেগাসিটি ঢাকার আকাশে দীর্ঘ সময় পর বায়ুদূষণের মাত্রা আবারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৫৭ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
বায়ুমান সূচকের এই স্কোরটি পরিবেশ বিজ্ঞানের ভাষায় ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিছুদিন আগে শহরের বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও সাম্প্রতিক শুষ্ক আবহাওয়া এবং শীতের প্রভাবে বাতাসে ধূলিকণা ও দূষক পদার্থের মিশ্রণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি ফের অবনতির দিকে যাচ্ছে। এই স্তরের দূষণ সাধারণ মানুষের বিশেষ করে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
একই সময়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি, যার বায়ুমান সূচক বা একিউআই স্কোর ছিল ৪৩৭। দূষণের তালিকায় ২৩১ স্কোর নিয়ে ভারতের কলকাতা শহর দ্বিতীয় অবস্থানে এবং ২০২ স্কোর নিয়ে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
এ ছাড়া ১৯২ স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি এবং ১৭২ স্কোর নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে চীনের ছেংদু শহর। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একিউআই স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে থাকলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলা হয়, যা ঢাকার বর্তমান অবস্থানের সাথে মিলে যাচ্ছে। এই তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ার মেগাসিটিগুলো বর্তমানে মারাত্মক বায়ুদূষণ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বায়ুমান সূচকের মানদণ্ড অনুযায়ী, শূন্য থেকে ৫০ স্কোরকে ‘ভালো’ এবং ৫১ থেকে ১০০ স্কোরকে ‘মাঝারি’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সূচক ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে থাকলে তা সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। তবে স্কোর যখন ১৫১ ছাড়িয়ে যায়, তখন তা জনস্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
২০-এর ওপরে স্কোর গেলে তাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয় এবং এই অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর স্কোর ৩০১ ছাড়িয়ে ৪০০-এর কোটায় পৌঁছালে তা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা যেকোনো সুস্থ মানুষের জন্যও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ঢাকার বর্তমান অস্বাস্থ্যকর বায়ু পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষকে বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে নির্মাণাধীন এলাকার আশেপাশে ধূলিকণার প্রকোপ বেশি থাকায় সতর্ক থাকা জরুরি। প্রতি বছর শীত মৌসুমে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন এবং বৃষ্টিহীন আবহাওয়ার কারণে ঢাকার বাতাস এমন দূষিত অবস্থায় পৌঁছায়।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, কলকারখানার ধোঁয়া এবং যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন রোধ না করা গেলে এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা জনসমাগমস্থলে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা জারির প্রয়োজন হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।